মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদের ছুটিতে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে যেমন সময় কাটাতে পছন্দ করেন, তেমনই প্রকৃতির টানে ছুটেও যান অনেকে। ঈদের ছুটিতে তাই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়।
বেড়ানোর জায়গা হিসেবে কারও পছন্দ নদী-সমুদ্র, কারও বা আবার পাহাড়। আবার অনেকেই ছুটে যান প্রাকৃতিক কোনো বনাঞ্চলেও। এই ছুটিতে পাহাড়-নদী-অরণ্যের আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তা ঠিক করুন এখনই।
কক্সবাজার: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র অবশ্যই কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। ঈদের ছুটিতেও কক্সবাজারে ভ্রমণ-পিপাসুদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। কক্সবাজারে সমুদ্রের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেলে নানা মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট পাবেন। উপভোগ করতে পারবেন নানা ধরনের সামুদ্রিক খাবারের স্বাদও। কক্সবাজার যেতে চাইলে ঢাকার কলাবাগান, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর থেকে নানা বাস যায়, তার একটিতে সওয়ার হতে হবে আপনাকে।
সেন্টমার্টিন: অনেকেই শুধু কক্সবাজার ঘুরে আসে, সেন্টমার্টিন পর্যন্ত আর যান না। কক্সবাজার গিয়ে সেন্টমার্টিনে না যাওয়া মানে আপনার সমুদ্র-দর্শন অপূর্ণ থেকে যাওয়া। কক্সবাজার গেলে তাই অবশ্যই বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল এই দ্বীপে ঘুরে আসুন। আগে যারা শুধু কক্সবাজার গিয়েছেন তারা সরাসরি সেন্টমার্টিন ঘুরে আসতে পারেন। রাজধানীর কলাবাগান, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা কোম্পানির বাস যায়। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে যেতে হবে নারিকেলজিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিনে। তবে জাহাজের টিকেট আগে থেকেই কেটে রাখা ভালো।
চট্টগ্রাম : কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও ঘুরতে যেতে পারেন। এ জেলার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অনেক পর্যটক যান। ফয়েস লেক নামে থিম পার্কও খুব নামকরা। চট্টগ্রামে গেলে পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘুরে আসতে পারেন। থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল রয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। রাজধাণীর কলাবাগান, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ থেকে বাসে করে আপনি চট্টগ্রামে যেতে পারবেন।
সুন্দরবন : ঈদের ছুটিতে যেতে পারেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত হলেও ঘুরতে যাওয়ার জন্য খুলনা অংশে যাওয়াই ভালো। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত সুন্দরবনে যেতে চাইলে কলাবাগান, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে বাসে করে যেতে হবে। খুলনা শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল পাবেন। এ ছাড়া বন-বিভাগের রেস্ট হাউজগুলোতেও থাকতে পারবেন।
সিলেট: পূণ্যভূমি সিলেটকে চা পাতার জন্য দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ বলা হয়। সিলেটে রয়েছে শাহজালাল, শাহ পরানের মাজার। এ মাজার প্রাঙ্গণেই রয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী নায়ক সালমান শাহ’র মাজার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম জাফলং। এটি দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং। সিলেটে আরও দেখতে পারেন লালাখাল ও বিছানাকান্দি। যেতে পারেন রাতারগুলেও। আর এর ফাঁকে কোনো একটি চা-বাগানে ঢুঁ মারতে পারেন। রাজধানীর কলাবাগান, সায়েদাবাদ থেকে সিলেটের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়।
শ্রীমঙ্গল: শ্রীমঙ্গলকে অনেকেই জেলা ভেবে ভুল করে থাকেন, আসলে এটি মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল দেশ-বিদেশের পর্যটকের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাইক্কার বিলসহ নানা দর্শনীয় স্থান। বর্ষায় শ্রীমঙ্গল সাজে অপরূপ রূপে। শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য রয়েছে ভালো মানের বেশ কিছু হোটেল। এ ছাড়া এখানে গড়ে গ্রান্ড সুলতান টি-রিসোর্ট, দুসাই রিসোর্টসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের এই জেলা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি। এ জেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্থান। বর্ষাকালে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পাহাড়ের উপর তুলার মতো মেঘ রাশি উপভোগ করতে যেতে হবে সাজেক ভ্যালিতে। এ জেলার কাপ্তাই লেক আরেকটি দর্শনীয় স্থান। রাজধানীর কলাবাগান, কল্যাণপুর ও সায়েদাবাদ থেকে রাঙামাটি যেতে পারবেন। এখানে থাকার জন্য হোটেলের পাশাপাশি ছোট ছোট কটেজ পাবেন।
খাগড়াছড়ি: ভ্রমণ-পিপাসুদের কাছে খাগড়াছড়িও একটি প্রিয় নাম। খাগড়াছড়ির আকাশ-পাহাড়ের মিতালী আপনাকে মুগ্ধ করবে। রয়েছে উপজাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা। এখানে গিয়ে যেদিকেই তাকাবেন শুধু সবুজ আর সবুজ চোখে পড়বে। রাঙামাটির মতো রাজধানীর কলাবাগান, কল্যাণপুর ও সায়েদাবাদ থেকে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।
বান্দরবান: মেঘের সাথে যারা মিতালি গড়তে চান, তারা যেতে পারেন বান্দরবান। এখানে নানা পাহাড়ের বুকে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যাবে। নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাতের মতো আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। বান্দরবান শহরে থাকার মতো রয়েছে অনেক হোটেল। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বান্দরবানে যাওয়া যায়। ট্রেনেও যেতে পারেন বান্দরবান, এক্ষেত্রে প্রথমে চট্টগ্রামে যেতে হবে, তারপর সেখান থেকে যেতে হবে বান্দরবান।