বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

ধনীদের আয় বেড়েছে ৬৪ ভাগ

ধনীদের আয় বেড়েছে ৬৪ ভাগ

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে গত চার বছরে ধনী-গরিব সবার আয় বাড়লেও সে তুলনায় আয় বাড়ার হার সবচেয়ে কম নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তবে সব শ্রেণির মানুষেরই খরচ বেড়েছে এবং আয়বৈষম্যও বেড়েছে।

এসব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস-এর এক গবেষণায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দুই হাজার ৪৬টি খানা বা বাড়ির উপর জরিপ করে এই গবেষণাটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

করোনা ভাইরাস মহামারির আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ ধরণের জরিপ চালিয়েছিল বিআইডিএস। সে সময় যাদের ধনী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল তাদের বার্ষিক আয় ছিল আট লাখ ৫৪ হাজার ১৪৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতিমাসে আয় ছিল ৭১ হাজার টাকার মতো।

তবে ২০২২ সালে এসে তাদের বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ টাকার বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৬৪ ভাগ আয় বেড়েছে তাদের।

বিআইডিএস-এর গবেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালে যেসব পরিবারের উপর জরিপ চালানো হয়েছিল , ২০২২ সালে আবারো সেই একই পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে সংস্থাটি।

‘ধনীদের’ মতো এত বেশি আয় বাড়েনি আর কোনো শ্রেণির, যার অর্থ হচ্ছে ধনীরা আরো ধনী হয়েছে এবং গরীব ও মধ্যবিত্তদের সাথে তাদের আয়ের পার্থক্যও বেড়েছে আরো।

বিআইডিএস-এর গবেষণা মতে, ২০১৯ সালে যাদের বার্ষিক আয় ছিল চার লাখ দুই হাজার টাকার মতো, ২০২২ সালে তাদের আয় হয়েছে চার লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এদের ‘নিম্ন মধ্যবিত্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে গবেষণায়।

এই গবেষণার সাথে যুক্ত বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল বলেছিলেন, ‘মধ্যবিত্ত যাদের নির্দিষ্ট আয়, বেতনের উপর নির্ভরশীল, তারা মুল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে পড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, কিন্তু তাদের আয় সেভাবে বাড়েনি।’

তার মতে, মধ্যবিত্তর সংজ্ঞা নির্ধারণ করাও কঠিন। যারা খুব গরিব, সরকার তাদের টার্গেট করতে পারে, কিন্তু মধ্যবিত্ত সব সময় বঞ্চিত থেকে যায় সবকিছু থেকে।’

বাংলাদেশে মূলত দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস। ওই মানদণ্ড মাথায় রেখে তথ্য সংগ্রহ করে বিআইডিএস।

বিবিএস-এর মানদণ্ড অনুযায়ী নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং ধনীর কোনো সংজ্ঞা নেই।

কিন্তু আয়ের হিসাবে ধনী, উচ্চ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র আর অতি দরিদ্র এই পাঁচটি শ্রেণি বিন্যাস করেছে বিআইডিএস।

এ হিসেবে দেখা যায়, নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র শ্রেণিতে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া সার্বিকভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমেছে।

কিন্তু গবেষণা কিভাবে করা হয়েছে? বিআইডিএস গবেষক কাজী ইকবাল বলেন, এটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে করা হয়।

ইকবাল বলেন, ‘ধরা যাক, একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রতি দিনের জন্য ২২২০ ক্যালরি শক্তি দরকার, এখন এর জন্য কী ধরণের খাবার লাগবে, সেটার একটা তালিকা করা হয়, এরপর সেটার দাম কত, তা ঠিক করা হয়। আর ওই সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে দারিদ্র্যসীমা। বিশ্বব্যাপী এভাবেই এটি করা হয়।’

এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘মার্কেট বাস্কেট পরিমাপক’। কিন্তু বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধনী-গরিবের এই আয়ের হিসাব কতেটা প্রাসঙ্গিক?

একজন বছরে ১৪ লাখ টাকা আয় করলেই তাকে কি ধনী বলা যাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, এই হিসেব বর্তমান সমযের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অধ্যাপক বিদিশা বলেন, ‘আপনি যদি এক বছর আগেও চিন্তা করেন, তার সাথে এখন যে হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, ওই হিসাব ধরতে হবে। একইসাথে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের আয় বাড়ছে না। এজন্য এটা জরুরি যে এই পুরো বিষয়টা যাতে আপডেট করা হয়। সময়ের সাথে এটাকে পরিবর্তন করে তারপর আমাদের উপসংহারে আসা দরকার।’

অধ্যাপক বিদিশা মনে করেন, আয়ের ভিত্তিতে যে শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে নাজুক অবস্থায় থাকে, যাদের অনেকে এখন দারিদ্যসীমার ওপর থাকলেও যেকোনো সময় নিচে নেমে যেতে পারে। ওই কারণে আয়ের পাশাপাশি কার কতটুকু খরচ করার ক্ষমতা আছে, সেটাও আমলে নেয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক বিদিশা।

তিনি আরো বলেন, ‘খানা জরিপে আমরা যে হিসাবটা করি, সেটা হয় খরচের ভিত্তিতে। কারণ আয়ের হিসাবটা অনেক সময় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। দরিদ্রদের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো বলতে পারি, একেবারে নূন্যতম প্রয়োজন মেটানোর সক্ষমতা আছে কিনা। কিন্তু ধনীর ব্যাপারটা আপেক্ষিক।’

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, এই শ্রেণি বিন্যাস হয়েছে ‘সাবজেক্টিভ পভার্টি’ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সংজ্ঞায়িত করেছে যে সে কোন শ্রেণির অর্ন্তগত।

অধ্যাপক মিজ বিদিশা মনে করেন, সনাতন যে খানা জরিপ পদ্ধতির মাধ্যমে দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করা হয়, সেটাতে হয়তো একটা তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায়। তবে আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে বাস্কেটের ভিত্তিতে হিসাবটা হচ্ছে, সেটার নিয়মিত আপডেটের দরকার আছে।

বিদিশা বলেন, ‘এই আপডেটটা আমরা করি অনেক দিন পরপর। কিন্তু এটি অন্তত প্রতি বছর করা দরকার।’

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877