সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন

বিয়ের ৪ মাস পর তালাক, মাথা থেঁতলে খুন!

বিয়ের ৪ মাস পর তালাক, মাথা থেঁতলে খুন!

স্বদেশ ডেস্খ:

ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজারে চাঞ্চল্যকর হাসি আক্তার হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি সোহেল রানাকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বিয়ে বিচ্ছেদের দুই মাস পর হাসির মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যান সোহেল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোহেলের সাবেক স্ত্রী হাসি আক্তার।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।

র‍্যাব-৪-এর অধিনায়ক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪-এর একটি দল গতকাল রোববার রাতে কুমিল্লা শহরের ধর্মসাগর পার্কের সামনে অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামি মো. সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে।

চাঞ্চল্যকর হাসি আক্তার হত্যা মামলার তদন্ত সূত্রে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, নিহত হাসির সঙ্গে চার মাস আগে সোহেল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে শুরু করার আগেই তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোহেলসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে হাসির ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। একপর্যায়ে হাসি তার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘটনার দুই মাস আগে উভয় পক্ষের অভিভাবকের উপস্থিতিতে আসামি সোহেলের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়ার পর হাসি আক্তার মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে তিনি একটি এনজিওতে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে সাভারের আমীন বাজারের শিবপুর গ্রামে নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করা শুরু করেন। কিন্তু আসামি সোহেল সব সময়ই হাসিকে তার অফিসে যাওয়া-আসার পথে এবং ভাড়া বাসায় গিয়ে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে টাকা দাবি করতেন। এসব কারণে হাসি তার সাবেক স্বামী সোহেলকে ওই বাসায় যেতে নিষেধ করেন। এতে সোহেল  ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এমনকি সোহেলকে কোনো টাকা দেবেন না বলেও স্পষ্ট জানান হাসি৷ তখন সোহেল আরও ক্ষিপ্ত হন এবং হাসিকে হত্যা করবেন বলে হুমকি দেন।

যেভাবে খুন হন হাসি

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, এত সব ঘটনার পর হাসিকে হত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন সোহেল এবং সুযোগ খুঁজতে থাকেন। গত ১ মে হাসির অফিস বন্ধ থাকায় তিনি ভাড়া বাসায় ছিলেন। সেদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সোহেল ভিকটিমের ভাড়াবাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন এবং তার কাছে আগের মতো টাকা দাবি করেন। তখন হাসি আক্তার আগের মতোই টাকা দিতে অস্বীকার করলে সোহেল তাকে এলোপাথারিভাবে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। এ সময় হাসি চোখে এবং মাথার এক পাশে মারাত্বক আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে যান।

ওই সময় সোহেল হাসির চুল ধরে ফ্লোরের টাইলসের সঙ্গে উপর্যুপরি মাথায় আঘাত করতে থাকেন এবং সবশেষে খাটের নিচে থাকা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারাত্মকভাবে থেঁতলে দেন। এ সময় হাসির মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে ফ্লোর ভিজে যায় এবং তার তার নিথর দেহ ফ্লোরে পড়ে থাকে। হাসির মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে ভেবে সোহেল আলমারির ড্রয়ার থেকে স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে  দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান।

পরে বাড়ির মালিক হাসিকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম ও অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতলে নিয়ে ভর্তি করে। এরপর নিউরোলজি সায়েন্সের আইসিওতে লাইফ সাপোর্টে ছয় দিন থাকার পর অবশেষে গত ৭ মে মারা যান হাসি।

র‍্যাব আরও জানায়,  এই ঘটনার পরে হাসির মা বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানায় মামলা হওয়ার পর আসামি এবং তার পরিবার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদীকে খুন-জখমের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করেছিল। এরপর সর্বশেষ প্রায় পাঁচ মাস ধরে কুমিল্লা শহরে আত্মগোপনে থাকা সেই সোহেলকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877