মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির অচলাবস্থা কাটেনি। হাজার হাজার শ্রমিক দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। অনেকে অর্থকড়ি খরচ করে নিঃস্ব অবস্থায়। কিন্তু তাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। শ্রমিকদের নিয়ে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা থেমে নেই। অবৈধ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হওয়ার খবর জানা গেছে।
নয়া দিগন্তে এ ধরনের একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সহায়-সম্বল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়া হাজার হাজার শ্রমিক একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার। ভাগ্য পরিবর্তনের সোনালি স্বপ্ন চোখে নিয়ে শ্রমিকেরা দেশ ছেড়েছিলেন, তবে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছে একটি অসাধু চক্রের দুর্নীতিবাজ কিছু ব্যক্তি। শ্রমিকদের জিম্মি করে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রিপোর্টে এ চক্রের দুর্নীতির বিভিন্ন প্রক্রিয়াও তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, ভিসার মেয়াদ বাড়ানো, পাসপোর্ট নবায়ন বা পাসপোর্ট করানোর নামে দালাল সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে শ্রমিকদের টাকা। এসব কাজে বাংলাদেশ হাইকমিশনের লোকজনের সাথে যোগসাজশে, নির্ধারিত ফির চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ অর্থ আদায় করা এবং তা ভাগাভাগির অভিযোগ করেছেন শ্রমিকেরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কয়েক লাখ শ্রমিকের ভাগ্য নিয়ে খেলছে ১০টি দালাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বিন আব্দুল নূর যিনি সেখানে ‘দাতু আমিন’ নামে পরিচিত। তার নেতৃত্বে হাজার হাজার বৈধ ও অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিককে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন নিয়ন্ত্রণ করছে এই সব সিন্ডিকেটকে। মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনারকে হাত করে সিন্ডিকেটের হোতা এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই স্থানে ৯ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা হাইকমিশনার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা দালাল সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী বৈধ ও অবৈধ মিলে প্রায় ছয় লাখ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে।
অভিযোগগুলো গুরুতর। বিশেষ করে যেখানে খোদ হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশের শ্রমবাজার বারবার হোঁচট খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
ডা: মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাস পেরোতেই এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে শ্রমিক আমদানির নতুন প্রক্রিয়া চালুর কথাও জানান।
অভিযোগ রয়েছে, সেদেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘিরেই সব সময় দুর্নীতির এই চক্র বা সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট বা চক্র নিয়ে অনেক টানাহেঁচড়া, আলোচনা-সমালোচনা হলেও এর ‘মূল হোতা’ হিসেবে পরিচিত হাইকমিশনের কিছু কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেনি। বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন এসব কর্মকর্তা আর হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে।
বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার যখন দিনদিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, তখন মালয়েশিয়া আমাদের জন্য একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় বাজার নিঃসন্দেহে। দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সে বাজার যেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে না যায়, সেই উদ্যোগ জনশক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। কারণ, এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত।