রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ধারণার অনেকগুলোই চীনের অনুরূপ : চীনা রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ধারণার অনেকগুলোই চীনের অনুরূপ : চীনা রাষ্ট্রদূত

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের উচিত সহযোগিতার জন্য ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরো গভীর করা’ এবং নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করা।

তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের (জিসিআই) আওতায় সহযোগিতার সুযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক চীন।’

বিশেষ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা বাংলাদেশে শিল্পের উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করতে এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর গুণগত মান ও প্রতিযোগিতার মান উন্নয়নে ইচ্ছুক।

শনিবার (৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক : ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ (বাংলাদেশ-চায়না রিলেশনস : প্রগ্নসিস ফর দ্য ফিউচার) শীর্ষক কসমস ডায়ালগ অ্যাম্বাসেডরস’ লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে মূল বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ ও চীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধু হিসেবে আরো কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থান প্রত্যক্ষ করায় এটি বাংলাদেশীদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি বড় উৎস। প্রেসিডেন্ট শি’র কাছ থেকে আমরা জানি, চীনের জনগণের একটি স্বপ্ন আছে। আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ অর্জনের চেষ্টা করছি, তখন আমরা বাংলাদেশেও তাই করছি, যার দ্বারপ্রান্তে আমরা আছি।’

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ‘এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে চীনের সাথে সম্পর্ক এই আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টার ভিত্তি হিসেবে অব্যাহত থাকবে।’

রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, চীনা পক্ষ সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক অব বাংলাদেশ’ লক্ষ্য করেছে এবং বিশ্বাস করে যে তাদের অনেক ধারণা চীনের ধারণার অনুরূপ।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পররাষ্ট্রনীতি সংরক্ষণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে চীন সমর্থন করে।’

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্ব আজ এক শতাব্দীতে অদৃশ্য বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সমৃদ্ধির পেন্ডুলাম প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে। চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই নজিরবিহীন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।’

এ বছর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালুর দশম বার্ষিকী।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মতো বাংলাদেশে আটটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করে ব্যবহার করা হবে।

রাষ্ট্রদূত ২০১৬ ও ২০১৯ সালে উচ্চ পর্যায়ের সফরের ফলাফল এবং বিআরআই’র আওতায় সহযোগিতা জোরদারের কথা তুলে ধরে বলেন, রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের কাজও শুরু হবে।

সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের উচিত নিজ নিজ জাতীয় অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথ অনুসরণে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখা।

চীন ও বাংলাদেশ উভয়ের আধুনিকীকরণের সাথে একটি বিশাল জনসংখ্যা জড়িত।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সমস্যাগুলো সমাধান করি, সিদ্ধান্ত নিই এবং পদক্ষেপ নিই তখন আমাদের সর্বদা বাস্তবতা মনে রাখা উচিত। আমাদের উচিত শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ অনুসরণ করা এবং কিছু দেশ কর্তৃক গৃহীত যুদ্ধ, উপনিবেশ এবং লুণ্ঠনের পুরানো পথে চলতে অস্বীকার করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবেই সমগ্র বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীন বাংলাদেশের নিজস্ব উন্নয়নের পথ বেছে নেয়ার বিষয়টিকে সম্মান করে এবং এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে কৌশলগত যোগাযোগ ও পারস্পরিক শিক্ষা জোরদার করতে ইচ্ছুক। চীন ও বাংলাদেশের উচিত মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং এক কণ্ঠে বাহ্যিক হস্তক্ষেপকে ‘না’ বলা।”

ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ককে বন্ধুত্বের একটি মডেল হিসেবে গড়ে তোলা এবং অভিন্ন ভবিষ্যতের সাথে মানব সমাজ গঠনে তাদের অবদান রাখা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং স্বার্থের সম্মিলন গভীর করতে হবে, ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধুদের একটি মডেল স্থাপন করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের উচিত একটি উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির পক্ষে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারীকরণ ও সহজীকরণকে উৎসাহিত করা। আমাদের সংরক্ষণবাদ, ‘বেড়া ও বাধা’ স্থাপন, বিচ্ছিন্নতা এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা উচিত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের অবশ্যই জাতিসঙ্ঘের মূলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং জাতিসঙ্ঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার মৌলিক নিয়মাবলী সমুন্নত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে রক্ষা করা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তর গণতন্ত্রের প্রচার করা এবং বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থাকে আরো ন্যায্য ও আরো ন্যায়সঙ্গত করার জন্য একসাথে কাজ করা।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা তাদের পূর্বসূরিদের কাঁধে দাঁড়িয়ে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দুই বছরের মধ্যে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করতে সর্বস্তরের বাংলাদেশী বন্ধুদের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।’

অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে আরো ছিলেন, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের গবেষণা বিভাগের ভাইস ডিন লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি, চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ফেলো ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক কান্তি বাজপেয়ী, সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস), চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লিউ জংয়ি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইলুফার ইয়াসমিন, ফুদান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক চায়না লিন মিনওয়াং, ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসার্চ ফেলো চায়না এলআই হংমেই, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক এ করিম।

সূত্র : ইউএনবি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877