টানা দশটি ওয়ান ডে ম্যাচ হেরে শুক্রবার নটিংহ্যামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করছে পাকিস্তান।
দু’বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল পাকিস্তান। তবে গত দু’বছরে সরফরাজ আহমদদের চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ০-৫ ব্যবধানে একদিনের সিরিজে পর্যুদস্ত হওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তড়িঘড়ি ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিল সিরিজ খেলতে। যাতে বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ও পিচের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ওয়ানডে সিরিজে ০-৪ ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান। যে পেস আক্রমণ পাকিস্তানের গর্ব ছিল, সেটাই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ বলেছেন, ‘২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাফল্য এবারের বিশ্বকাপে আমাদের ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করবে। বিগত কয়েকটি সিরিজে আমরা আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারিনি ঠিকই, তবে সঠিক সময়ে আমরা জ্বলে উঠব ট্রফি জেতার জন্য। ইংল্যান্ডে আমরা এক মাসের বেশি সময় আছি। আশা করছি আমরা এর সুবিধা পাব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শক্তিশালী দল। ওদের ব্যাটিং খুবই মজবুত। তবে মোহাম্মদ আমিরের মতো পেসার রয়েছে আমাদের হাতে। আমার বিশ্বাস আমির বিশ্বকাপে সেরা পারফরম্যান্সটা মেলে ধরবে।’
উল্লেখ্য, স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। এটাই তার প্রথম বিশ্বকাপ। আমিরকে সামনে রেখেই যে পাকিস্তান পেস আক্রমণ সাজাচ্ছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের প্রাথমিক দলে মোহাম্মদ আমির ছিলেন না। যা নিয়ে জোর সমালোচনা হয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার পর আমিরকে বিশ্বকাপ দলে ফেরাতে একপ্রকার বাধ্য হন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হক।
বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাফল্য মোটেও ভালো নয়। দশটি ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে মাত্র তিনটিতে। গত বিশ্বকাপে ক্রাইস্টচার্চে ক্যারিবিয়ানরা ১৫০ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। ওই ম্যাচে ১৩ বলে ৪২ রান করেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। নিয়েছিলেন তিনটি মূল্যবান উইকেটও। এবারের বিশ্বকাপেও আন্দ্রে রাসেলের উপর সবার নজর থাকবে। দ্বাদশ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন রাসেল। বিশ্বকাপে তা অব্যাহত থাকে কি না সেটাই দেখার। তবে রাসেলর ব্যাটে ঝড় উঠলে বহু ম্যাচে অঘটন ঘটবে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ৪২১ রানের বিশাল স্কোর খাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ফেভারিট তকমা না পেলেও বিশ্বকাপে কিন্তু বাজিমাত করার ক্ষমতা রাখে। কার্লোস ব্রেথওয়েট বুক বাজিয়ে বলে দিতে পারেন, তার দল একদিনের ম্যাচে ৫০০ রান তোলার ক্ষমতা রাখে।
এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট তকমা না পেলেও পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দুই দলই কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে। পাকিস্তানের ব্যাটিং যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ম্যাচে ওপেন করতে পারেন ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। তিনে নামতে পারেন বাবর আজম। যার উপর পাকিস্তানের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে। হারিস সোহেল ও মোহাম্মদ হাফিজের মধ্যে একজনকে খেলানো হতে পারে। পাঁচে নামতে পারেন ক্যাপ্টেন সরফরাজ আহমদ। তবে ছ’নম্বরে তাকে ব্যাট করতে দেখা গেছে। লোয়ার অর্ডারে ইমাদ ওয়াসিম, আসিফ আলির খেলার সম্ভাবনা বেশি।
পাকিস্তানি বোলিংয়ে আছেন শাদাব খান, মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি ও শাহিন আফ্রিদি।
ইংল্যান্ডের পিচে প্রচুর রান উঠছে। তাই দুই দলের সাফল্য কিন্তু নির্ভর করছে ব্যাটসম্যানদের উপরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন ক্রিস গেইল। বিদায়ী বিশ্বকাপে তিনি সেরাটা মেলে ধরার চেষ্টা করবেন। এভিন লুইসের সঙ্গে তিনিই হয়তো ওপেন করবেন। দারুণ ছন্দে আছেন শাই হোপ। মিডল অর্ডারে ক্যারিবিয়ানদের বড় ভরসা শিমরন হেটমায়ার, ড্যারেন ব্র্যাভো। ক্যাপ্টেন জ্যাসন হোল্ডার ছয়ে ও আন্দ্রে রাসেল নামতে পারেন সাত নম্বরে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আট্যাক যথেষ্ট শক্তিশালী। কেমার রোচ, শেলডন কটরেল, ওশানে টমাসও প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে পারেন।
বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেক্ষেত্রে দুই দলের পেসারদের কাছে নটিংহ্যামের বাইশ গজ হয়ে উঠতে পারে স্বর্গরাজ্য!
ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ৩টা।