স্বদেশ ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটিতে অ্যাপভিত্তিক গাড়ির ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে যাত্রীরা অভিযোগ করলে সেই ড্রাইভারের অ্যাপ ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়। একবার কোনো ড্রাইভারের অ্যাপ ডিঅ্যাক্টিভেশন করা হলে সেটি সহসাই উন্মুক্ত করা হয় না। কোনো ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা যাচাই না করেই অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলো ড্রাইভারের অ্যাপ ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ড্রাইভারকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় না।
উবার-লিফটের বেশ কয়েকজন চালক বলেছেন, যাত্রীদের ঠুনকো অভিযোগের ভিত্তিতে হঠাৎ করেই অ্যাপ ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিলে ড্রাইভারদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোনো ড্রাইভার ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ডলারে গাড়ি কিনলে তাকে প্রতি মাসে সেই গাড়ির কিস্তি শোধ করতে হয়। বাড়ি কিনলে সেই বাড়ির মাসিক মর্টগেজ রয়েছে। এ ছাড়া সংসারের বিভিন্ন খরচ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট ড্রাইভার বিপাকে পড়ে যান। হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় তার ইনকাম। ফলে তার জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সময়টায় তাকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স। অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলো যাতে যখন তখন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ড্রাইভারদের অ্যাপ বন্ধ করতে না পারে কিংবা ডিঅ্যাক্টিভেশন করতে না পারে, সে জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সংগঠনটি। ডিঅ্যাক্টিভেশন বন্ধ করতে তারা ঈদের পর বড় পরিসরে আন্দোলনে যাচ্ছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের লেবার অর্গানাইজার মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, নিউইয়র্কে যখন তখন কোনো ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তার অ্যাপ ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়। ফলে ওই ড্রাইভার চাইলেও তা নিরসন করতে পারেন না। যেমন কোনো যাত্রী অভিযোগ দিতে পারেন যে ড্রাইভারের ব্যবহার খারাপ, তিনি আন্তরিক নন, তিনি ভালো সেবা দেননি। ড্রাইভারকে যেভাবে যেতে বলেছেন, তিনি সেভাবে যাননি, উল্টো তিনি তার মতো করে গাড়ি চালিয়েছেন। তিনি হার্ডব্রেক করেছেন, তিনি ড্রাঙ্ক ছিলেন, তিনি কথা শোনেননি। তিনি গাড়ি চালানোর সময়ে অনবরত কথা বলেছেন-এমন অভিযোগসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসতে পারে অ্যাপভিত্তিক কোম্পানির কাছে। এ ধরনের অভিযোগ পেলে উবার-লিফটসহ অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট ড্রাইভারকে ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়। তিনি বলেন, গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। এর ভিত্তিতে তারা ব্যবস্থাও নিতে পারে। কথা হচ্ছে, ড্রাইভারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। অভিযোগের বিষয়ে ড্রাইভারের কোনো বক্তব্য আছে কি না, তা শুনতে হবে। আমরা চাই কোনো ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানতে হবে, তার বক্তব্য শুনতে হবে। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে হতে হবে। একজন বিচারক সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেবেন। অথবা সিটির কোনো সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সিদ্ধান্ত দেবেন। সিটির কোনো প্যানেল থাকতে পারে অথবা সিটির ইন্ডিভিজ্যুয়াল কাউকেও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এখন যে পদ্ধতি প্রচলিত, তা অ্যাপভিত্তিক গাড়ির কোম্পানিগুলোর সিদ্ধান্ত।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সিটিতে প্রায় এক লাখ অ্যাপভিত্তিক গাড়ি আছে। ড্রাইভার আছেন প্রায় দুই লাখ। সিটিতে গড়ে প্রতিদিন ৯ লাখ যাত্রী ওঠানামা করেন অ্যাপভিত্তিক গাড়িগুলোতে। একসঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার ড্রাইভার মাঠে থাকেন। একেকজন ১০-১২ জন যাত্রী পান। তারা আট ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি কাজ করেন। সেই হিসাবে একটি গাড়ি গড়ে কতজন যাত্রী পায়, আর কতই-বা আয় হয়? তারা সব সময় আশানুরূপ যাত্রী পান না। ২০১৬-২০১৯ সাল পর্যন্ত এই সমস্যা অনেক বেশি ছিল। ড্রাইভারদের আয়ও কম ছিল। যাত্রী কম ছিল। পরে অবশ্য ইয়েলোক্যাবের ড্রাইভারদের পেমেন্ট বাড়ানোয় তারা এখন খুশি। আর উবার ও লিফটের ড্রাইভারদের পেমেন্ট কিছুটা বাড়ানোতে তারাও ভালো আছে, যদিও বেশি বাড়েনি। তবে ডিঅ্যাক্টিভেশন হলে তারা বেশ সমস্যায় পড়েন।
টিপু সুলতান জানান, যখন তখন ডিঅ্যাক্টিভেশন বন্ধ করার জন্য নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান একটি বিল উত্থাপন করছেন। বিলটির নম্বর ও নামকরণ ঠিক হওয়ার পর রোজার পরে সিটি কাউন্সিলে উঠতে পারে। শেখর কৃষ্ণান নিজেই বিলটির স্পন্সর। তিনি বিলটি পাস করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।