বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৩ অপরাহ্ন

ঢাকায় আগুন নেভাতে পানির সঙ্কটে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের

ঢাকায় আগুন নেভাতে পানির সঙ্কটে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারে আগুন লাগার এক দিন পরেও ধোঁয়া উড়ছে আগুনে পুড়ে মাটিতে মিশে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে। পাশাপাশি বুধবার দুপুরে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে পাশের বহুতল ভবনেও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুড়ে যাওয়া বাজারে নিরবচ্ছিন্ন পানি দেয়ার পাশাপাশি পাশের ভবন থেকে সব মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।

যেসব কারণে এবার বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশি সময় লেগেছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- পানির স্বল্পতা।

মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর প্রায় ছয় ঘণ্টা লেগেছিল তা নিয়ন্ত্রণে আনতে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মো: মাইন উদ্দিন বলেছেন, তিনটি কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিলম্ব হয়েছে।

এগুলো হলো – পানির স্বল্পতা, উৎসুক জনতার ভিড় আর অতিরিক্ত বাতাস।

বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে এবার ফায়ার সার্ভিসকে দীর্ঘ পাইপ টেনে পানি নিতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের পুকুর থেকে। এছাড়া আগুন নেভানোর জন্য হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি নেয়ারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এর আগেও ঢাকার বড় অগ্নিকাণ্ডে পানির স্বল্পতায় ভুগতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। এক দশক আগে ঢাকার নিমতলীর ভয়াবহ আগুনে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তখনো আগুন নেভাতে পানির ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসকে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারের আগুনের ঘটনায় প্রায় ২২ হাজার বর্গফুট আয়তনের বঙ্গবাজারের পাঁচ হাজারের মতো দোকানের সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

পানির সঙ্কট কেন?
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হলেও এই শহরের কোথাও ফায়ার হাইড্রেন্ট দেখা যায় না। এমনটি অসংখ্য বড় ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে পিলার হাইড্রেন্টের অনুমতিপত্র নিলেও বাস্তবে ভবনগুলোতে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই।

ফায়ার হাইড্রেন্ট হলো আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহারের জন্য বিশেষ পানির কল। এটি ওয়াটার রিজার্ভার বা মূল পানির লাইনের (যেমন ওয়াসার লাইন) সাথে সংযুক্ত থাকে।

ফলে কোথাও আগুন লাগলে সেখানকার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোর সাথে পাইপ সংযুক্ত করে সহজেই পানি পেতে পারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

কিন্তু ঢাকায় এ ধরণের ব্যবস্থাই নেই। যদিও সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানোর ঘোষণা দিয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, শহরের মোড়ে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো বা পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু দূর পরপর ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো উচিত।

তিনি বলেছেন, ‘এটা বিস্ময়কর যে এ শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট একদমই নেই। ফলে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসকে দৌড়াতে হয় পুকুর জলাশয়ের খোঁজে। কিন্তু সেগুলোও তো দখল কিংবা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই পানি পেতে এমন বেগ পেতে হয়।’

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকা অনেক পুকুর এখন আর দৃশ্যমান নেই। জলাধার সংরক্ষণে আইন থাকলেও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীরা অনেক জলাশয় দখল করেছে। আবার অনেক জায়গায় রাস্তা ঘাট এত সরু থাকে যে পানির গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে পারে না।

আবার ইমারত নির্মাণ বিধি মালা অনুযায়ী ভবনগুলোতে ওয়াটার রিজার্ভার থাকার কথা থাকলেও ঢাকার হাজার হাজার ভবনে তার অস্তিত্ব নেই।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা বলছেন, ‘ঢাকার প্রতিটি ভবনে ভূগর্ভস্থ ওয়াটার রিজার্ভার থাকা উচিত হলেও তা কার্যত নেই। আগুনের খবর পেলে আমরা চার-পাঁচ হাজার লিটার পানি নিয়ে যাই তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য। কিন্তু আগুন একটু একটু ব্যাপকভাবে হলেই আরো পানির দরকার হয়। কিন্তু ভবনে, মার্কেটে ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার না থাকলে পানি পাব কোথায়? দূর থেকে আমরা পাইপে পানি আনি, কিন্তু কতটা পর্যন্ত দূর থেকে আনা সম্ভব?’

তিনি জানান, ‘সাধারণত সর্বোচ্চ দেড় হাজার ফুট পর্যন্ত দূর থেকে পানি নিয়ে তা আগুন নেভানোর কাজে লাগানো যায়। এর বেশি দূর হলে সেই পানি নিতে নিতে তাতে আগুন নেভানোর মতো চাপ থাকে না।’

দিনমনি শর্মা বলছেন, ‘এখন মটর বসিয়ে পাইপ দিয়ে ছাদে ট্যাংকিতে রাখা হচ্ছে সরাসরি। কোনো রিজার্ভার নেই। এ ধরনের ভবনে আগুন লাগলে নেভানোর পানি কই পাব আমরা? আর যেখানে রিজার্ভার করা হতো সেটি গ্যারেজ করে ভাড়া দেয়।’

আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, ঢাকার মতো না হলেও অন্য বড় শহরগুলোতেও পুকুর জলাশয় ভরাট হয়ে কমে আসছে পানির উৎস। এমনকি জেলা উপজেলা পর্যায়ের বাণিজ্যিক এলাকাগুলো কিংবা বাজারগুলোর সাথে থাকা পুকুরও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এর ফলে জেলা উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডও এখন নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

যদিও অভিযোগ আছে যে নতুন ভবন করার সময় এখন সবাই পিলার হাইড্রেন্ট করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিলেও সে অনুযায়ী ভবনে পিলার হাইড্রেন্ট রাখা হয় না।

এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আর পানির উৎস খুঁজে পায় না।

বঙ্গবাজারে পানি ছিল না
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বাজারটির ভেতরে একটি মসজিদ ছিল এবং সেখানকার ওজুর জন্য লাইন টেনে যে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেটিই ছিল বিশাল এই বাজারের ভেতরে একমাত্র পানির ব্যবস্থা। অথচ অন্তত পাঁচ হাজার ছোট-বড় দোকান ছিল এই বঙ্গবাজারে, যেখানে প্রতিদিন আসত লাখ লাখ মানুষ।

ফরিদ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেছেন, ভেতরে পানির অন্য কোনো ব্যবস্থার বিষয়টি কখনো কারো মাথাও আসেনি সেখানে।

তিনি আরো বলেন, ‘এত দিন ব্যবসা করি। কখনো তো এমন কিছু দেখিনি। মনে হতো সমস্যা হলেই কাছে ফায়ার সার্ভিস আছে, একটা ব্যবস্থা হবে।’

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877