স্বদেশ ডেস্ক:
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের টুংরাপাড়া গ্রামে প্রায় ১২ বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন কৃষিবিদ বজলুর রহমান (৪৮)। তিনি ১৯৯৬ সালে সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি, এজি, অনার্স পাস করেন। তার বাবা মৃত আবদুল মালেক।
সম্প্রতি টুংরাপাড়া গ্রামে মৃত মালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে শিকলবন্দি অবস্থায় বসে আছেন বজলুর রহমান। অপুষ্টিতে ভুগে তার শরীর ও চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে। কোনো কিছু জানতে চাইলে প্রলাপ বকেন। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ায় সন্তানদের কথাও কিছু বলতে পারেন না। স্বজনরা জানান, মলমূত্র ত্যাগ করায় প্রতিদিন ঘরটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়।
বজলুর মা জানান, প্রায় ২২ বছর আগে তার ছেলে মানসিক ভরসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে দেখানো হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পর শিফাত ও সুপ্তি নামে দুই কন্যাসন্তানের বাবা হন বজলুর। পরে আবারও তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এ অবস্থায় বছর পাঁচেক আগে বজলু ও দুই কন্যাসন্তানকে ফেলে চলে যান তার স্ত্রী। সে সময় পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বজলু। একের পর এক অঘটন ঘটাতে থাকলে নিরাপত্তার জন্য ভাইরা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দি করেন। সেই থেকে এই ঘরে বজলু কখনো হাঁটু গেড়ে মেঝেতে উবো হয়ে বসেন, কখনো বা বসা অবস্থায় সময় কাটান।
চাচাদের তত্ত্বাবধানে বজলুর দুই মেয়ে লেখাপড়া করেছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে সিফাতের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট মেয়ে সুপ্তি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
বজলুর ব্যাপারে কথা হয় তার সহপাঠী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক মানিকের সঙ্গে। তিনি জানান, ৮৮-৮৯ ব্যাচে তারা একসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি, এজি অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। বজলু এ সেকশনে সোহরাওয়ার্দী হলে, আর তিনি বি সেকশনে আশরাফুল হক হলে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি আরও জানান, বজলু লেখাপড়ায় বরাবরই এগিয়ে থাকতেন। দেখা হলে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতেন। সেশনজটের কারণে ১৯৯৬ সালে তারা অনার্স ফাইনাল সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।