স্বদেশ ডেস্ক:
বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ ১৪ জেলায় গতকাল রবিবার দিনভর গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। সরকারদলীয় নেতার ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পণ্যবাহী পরিবহন চট্টগ্রামের বাইরে যেতে, আবার প্রবেশও করতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ রুট ও দূরপাল্লার যাত্রীরাও পড়েন চরম দুর্ভোগে। অবশ্য বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিআরটিএ ও পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ নয় দফা দাবিতে ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্যপরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের ডাকে গতকাল ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। সংগঠনটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপেরও সভাপতি। কেবল ধর্মঘট সফল করতেই ঐক্য পরিষদ গঠন করেন তিনি।
এ আন্দোলনের কারণে গতকাল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১৪ জেলায় একযোগে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাও গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন অস্বাভাবিক করতে পারেনি। তাই বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতার ডাকে ধর্মঘট পালনে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকারি দল।
নয় দফা দাবি তুলে ধর্মঘট ডাকলেও এর নেপথ্যে ছিল সংগঠনটির শক্তি জানান দেওয়া। কেননা মঞ্জুরুল আলমের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের একাংশ আলাদা হয়ে ভিন্ন সংগঠন গঠন করে। তবে মঞ্জু গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ গড়ে তুললে একই নামে পাল্টা সংগঠনও দাঁড়িয়ে যায়। তাই জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিজেদের শক্তি জানান দিতেই আকস্মিক এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মঞ্জুর আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। প্রশাসনকে আমরা চিঠি দিয়েছি, আলটিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু তারা সমস্যার সমাধান করছে না। পুলিশের হয়রানি, মহাসড়কের চাঁদাবাজি ও টোকেন বাণিজ্য বন্ধের দাবিতেই ধর্মঘট ডেকেছি।’ তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপির নাশকতার সময় আমরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রেখেছি। কিন্তু সেই নাশকতার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য করেছে। তাদের দিয়ে পাল্টা কমিটিও করেছে।’
এদিকে রবিবার ভোরে ধর্মঘট শুরুর পর চট্টগ্রাম নগরী থেকে উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। পণ্যবাহী পরিবহন সীমিতভাবে চলাচল করলেও নগরীর বাইরে যায়নি। তবে ব্যক্তিগত ও ছোট যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। গতকাল সকালে নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতুসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মমুখী মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থেকে দুর্ভোগে পড়েন। গাড়ি না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান বাসায়।
এমন পরিস্থিতিতে বিকালে সার্কিট হাউসে পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন সিটি মেয়র নাছির। ঘণ্টব্যাপী চলা ওই বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মঞ্জুর আলম। সন্ধ্যা থেকেই স্বাভাবিক হতে শুরু করে গাড়ি চলাচল। মঞ্জুর আলম বলেন, ‘মেয়র মহোদয় আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি।’
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়ামসংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবে ঝগড়ার জেরে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদিনকে গুলির পর মঞ্জুকে আটক করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় আহত জয়নালের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলার এজাহার জমা দেন। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২১ ঘণ্টা পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় মঞ্জুকে।