স্বদেশ ডেস্ক:
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগের জেরে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে তাকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে দুই শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করে। তারা ঘটনার সম্মানজনক বিচার দাবিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই দফা সড়ক অবরোধ এবং স্কুলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। তবু শিক্ষার্থীরা অনড় থাকলে জেলা প্রশাসক জেলা জজের সাথে কথা বলে জানান, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তখন শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।
ওই দিন রাত সোয়া ৯টায় বগুড়ায় অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগে অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: গোলাম রব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো: মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি ঘ শাখায় বগুড়া জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ -৩ আদালতের বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে জারা পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত সোমবার ওই কর্মকর্তার মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে জজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে তার অপর সহপাঠীদের সাথে বাকবিতণ্ড সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতেই জজের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমমাধ্যমে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। এই সময় সে পোস্টে উল্লেখ করে, তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা সরকারি কর্মকর্তা। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।
ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের ৪ জন সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এই নিয়ে ওই জজ সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার ওই ৪ অভিভাবককে ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষিকার ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। ওই সময় সেই কর্মকর্তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হুমকি দিয়ে জেল দেয়ার কথা বলেন।
এই সময় দুই অভিভাবকে ওই জজের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এ খবর ছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা এ অপমান মেনে নিতে না পেরে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা স্কুলের সামনের রাস্তা দু’দফা অবরোধ করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসক বিচারের আশ্বাস দিলে তারা ক্যম্পাসে ফিরে যায়। এরপর স্কুল প্রাঙ্গনে সবাইকে নিয়ে প্রকাশ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকরা নিজেদের বক্তব্য দেন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।