স্পোর্টস ডেস্ক:
ইউরো বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৪-২ গোলে হেরেছে জার্মানি।
সমস্যাটা বলতে গেলে শুরু হয়েছে সেই ২০১৬ ইউরো থেকে। সেবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় জার্মানরা। এর পর থেকে জার্মান ফুটবলের পরিচিত সেই চেহারাটা যেন হারিয়েই গেছে। বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে, অবনমিত হয়েছে নেশনস লিগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এখন সামনের ইউরোতে খেলতে পারবে কি না, সে নিয়ে দেখা যাচ্ছে শঙ্কা। কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪-২ গোলের হারে এ শঙ্কাটাই আরও যেন জেঁকে বসল।
২০০৬ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে তারুণ্যের দাওয়াই দিয়ে যে বিকল জার্মান-যন্ত্রকে সারিয়ে তুলেছিলেন কোচ জোয়াকিম লো, যে জার্মান দল সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিল ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতে, এখন আবার সেই তারুণ্যশক্তির ওষুধ দিয়ে জার্মানিকে জাগিয়ে তুলতে পারছেন না কোচ। এক যুগ আগে বালাক, ফ্রেডরিখ, লেম্যান, ফ্রিঞ্জ, শ্নাইডার, নিউভিল নামের বুড়োদের হটিয়ে লো শয্যাশায়ী জার্মান ফুটবলকে জাগিয়ে তুলেছিলেন মেসুত ওজিল, সামি খেদিরা, ফিলিপ লাম, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার, ম্যানুয়েল নয়্যার, মারিও গোমেজ, টমাস মুলার, ম্যাটস হামেলস, জেরোম বোয়াতেং, টনি ক্রুস, মিরোস্লাভ ক্লোসা ও লুকাস পোডলস্কিদের নিয়ে। ২০১৮ বিশ্বকাপেও ভেবেছিলেন, এদের দিয়েই কাজ হবে। হয়নি। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়ে বাস্তবতার কঠিন জমিনে নেমে এসেছিল লো ও তাঁর দল।
এরপর আবারও শুরু হলো সেই চেনা পথে হাঁটা। লাম, ক্লোসা, পোডলস্কি আর শোয়াইনস্টাইগার আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ওজিল, বোয়াতেং, হামেলস, শুরলে, গোটশে, গোমেজ, মুলারদের সরিয়ে লো আবারও তারুণ্যে আস্থা রাখতে চাইলেন। পোড় খাওয়া যোদ্ধা ম্যানুয়েল নয়্যারের সামনে এখন রক্ষণভাগে দাঁড়ান নিকলাস সুয়েলে, আন্তোনিও রুডিগার, নিকো শুলজ, জোনাথান তাহ, ম্যাথিয়াস জিন্টারের মতো তরুণেরা। অভিজ্ঞ ক্রুসের সঙ্গে মিডফিল্ডে দেখা যায় জোশুয়া কিমিখ, লিওন গোর্তেকাদের। আক্রমণভাগে গতি এসেছে লেরয় সানে, সার্জ গেন্যাব্রির পায়ে। মূল স্ট্রাইকারের দায়িত্ব এখন টিমো ভের্নারের কাঁধে।
তাতে কি? ফলে কোনো পরিবর্তন আসছে না। বহুল চর্চিত ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১ ছক বাদ দিয়ে ৩-৪-৩ ছকে খেলিয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে পারছেন না লো। ২০০২ সালের পর গত রাতে জার্মানির বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ইতিহাসে এর আগে কখনো জার্মানিকে চার গোলের মালা পরাতে পারেনি ডাচরা, যে রেকর্ডটা হয়েছে কাল। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ডনিয়েল মালেন, জর্জিনিও ভাইনাল্ডামের সঙ্গে জার্মান ডিফেন্ডার জোনাথান তাহের আত্মঘাতী গোল মিলিয়ে ডাচদের কাছে ৪-২ গোলে হেরেছে জার্মানি। সবচেয়ে জঘন্য ভাবে চোখে ধরা পড়েছে রক্ষণভাগের শিশুতোষ ভুল, জার্মানির সঙ্গে এত দিন যা যেত না। ২০১৮ সাল থেকে যে রক্ষণভাগের ব্যর্থতায় ভুগছে জার্মানি, আপাতদৃষ্টিতে সেই অসুখের সঠিক দাওয়াই খুঁজে পাচ্ছে না তাঁরা।
তবে এই সমস্যার আশু সমাধান না খুঁজে পেলে হয়তো সামনের বছর ইউরোতেও দেখা যাবে না জার্মানিকে। আর সেটা হবে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার চেয়েও লজ্জাজনক। চার দিন পর গ্রুপের শীর্ষ দল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলতে নামবে জার্মানি। সে ম্যাচে জিততে না পারলে, একদম খাদের কিনারায় চলে যাবে দলটি।