স্বদেশ ডেস্ক: রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল রবিবার ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও গণভবনমুখী হয়ে পড়েছেন। মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার আগে অনেকে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে, চলবে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে কার ভাগ্যে নৌকা প্রতীক জোটে জানার জন্য আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর-৩ আসনটি জাতীয় পার্টি (জাপা) ধরে রেখেছে। দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ গত ১৪ জুলাই মারা যান। ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। গতকাল রবিবার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই রংপুরে আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার আশায় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সমর্থকদের নিয়ে ছোটখাটো বৈঠক করছেন। দল মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে প্রার্থী দেবে কিনা এ বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সভায় বলেছেন- এবার রংপুর সদর আসনে পৃথক প্রার্থী দেওয়া হবে। এর পর থেকেই মূলত আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নড়েচড়ে বসেছেন। সুদৃষ্টির প্রত্যাশায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের বাসায় অনেকে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন, শ্রমিক লীগ নেতা এমএ মজিদ, আবদুস ছালাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজী রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া প্রমুখ। তাদের মধ্যে অনেকে নগরীতে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তারও জানান দিচ্ছেন।
সূত্রমতে, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রেজাউল ইসলাম রাজু, আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ ছাড়া তুষার কান্তি ম-ল, রেজাউল ইসলাম মিলনের গতরাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা। তৌহিদুর রহমান টুটুল ঢাকার পথে রয়েছেন। অন্য প্রার্থীদেরও দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় আসার কথা। হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনোনয়ন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে আমি ঢাকায়। দলের হয়ে অনেক আগে থেকেই প্রচার চালাচ্ছি। এর আগে তিনবার দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর-৩ আসনে তাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন; কিন্তু মহাজোটের স্বার্থে তিনবারই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ আসনে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার তাকে বিমুখ করবেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সদর আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন এ আসনটি জাতীয় পার্টির কাছে। এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি নিজে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন। বর্তমানে আমি ঢাকায় রয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, আমি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। দল মনোনয়ন দিলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, আসনটি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবার কোনো ছাড় নয়। আমি এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছি। আশা করি হাইকমান্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নিরাশ করবেন না। রাতে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, দলের সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা মাথা পেতে নেব। তবে দীর্ঘদিন ধরে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। এবার এ আসনে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হবে। মনোনয়ন প্রত্যাশায় রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হব। অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও নৌকার বিজয়ে কাজ করব।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর দল। এক একটি আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বহু প্রার্থী থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু দল প্রার্থী চূড়ান্ত করলে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
ইসির দেওয়া তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর, যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়ন প্রত্যাহার ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ৫ অক্টোবর। সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হবে। রংপুর-৩ আসনে ১৭৫ ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ আসনে ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন, আর মহিলা ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন।