রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
পুতিনকে হটিয়ে ‘নতুন’ রাশিয়া গড়ার নীলনকশা

পুতিনকে হটিয়ে ‘নতুন’ রাশিয়া গড়ার নীলনকশা

স্বদেশ ডেস্ক:

রাশিয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা। পশ্চিমাপন্থি, দেশত্যাগী রুশদের নিয়ে গঠিত ‘রাশিয়ান অ্যাকশন কমিটি’কে সামনে রেখে তারা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়। ইরাক, আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে মার্কিন-ন্যাটো আগ্রাসনপরবর্তী তাঁবেদার সরকার স্থাপনের অনুরূপ রাশিয়াতেও অনুগতদের ক্ষমতায় বসাতে চায়। এই কাজে তারা সামনে রেখেছে দুটি আলোচিত মুখ গ্যারি কাসপারভ ও মিখাইল খর্দকভ্স্কি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসিতে প্রকাশ করা হয়েছে এই পশ্চিমা ‘নীলনকশা’। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আমাদের সময়-এর সহযোগী সম্পাদক প্রমিত হোসেন

ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারকে উৎখাত করার পর রাশিয়ার কী বন্দোবস্ত করা হবে, সেই পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে পশ্চিমা জোট। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুতিন সরকারকে উৎখাত করার পর ক্ষমতায় আসবে রাশিয়ান অ্যাকশন কমিটি। এ কমিটি ১৯৯১ সালের সীমান্তের স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিচুক্তি করবে ইউক্রেনের সঙ্গে, যুদ্ধের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ দেবে ইউক্রেনকে, বেসামরিকীকরণ করা হবে রাশিয়াকে এবং রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর আকার ছোট করে ফেলা হবে, রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ও সেন্টার ফর কমব্যাটিং এক্সট্রিমিজম বিলুপ্ত করা হবে, রুশ ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে।

অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংকসহ আরও ভারী অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে জার্মানির র‌্যামস্টেইন এয়ারবেসে ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা গত বৃহস্পতিবার যে বৈঠক করেছেন, সেখানে তাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দেখা গেছে। তার মধ্যে ন্যাটোর একটি পক্ষের স্পষ্ট মত হচ্ছে এ যুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয় এবং রুশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আরেক পক্ষের মতে, রাশিয়াকে অবশ্যই এমনভাবে বদলে দিতে হবে, যাতে সে প্রতিবেশীদের ওপর হামলা করতে না পারে। এর আগে পোল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট লেচ ভালেসা বলেছিলেন রাশিয়ার শক্তি অবশ্যই খর্ব করতে হবে, যাতে পাঁচ-১০ বছর যুদ্ধ করার সামর্থ্য তার না থাকে।
পশ্চিমা পরিকল্পনার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন পলিসি নামক সাময়িকীতে। সেখানে একটি নিবন্ধে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সামরিক দিক থেকে পুতিনের পরাজয় রাশিয়ার রাজনৈতিক রূপান্তরের পথ খুলে দেবে। যারা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্বেষণ করছে, তাদের পক্ষে পুরনো শাসকগোষ্ঠীকে ছিন্নভিন্ন করে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা নির্মাণ সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে রাশিয়ান অ্যাকশন কমিটি একটি নীলনকশা প্রণয়ন করেছে, যার মূল কথাÑ আইনের শাসন, ফেডারেলতন্ত্র ও পার্লামেন্টতন্ত্রের ভিত্তিতে পুনরায় রুশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। পুতিনের সরকারকে উচ্ছেদ করার দুই বছরের মধ্যে সংসদীয় পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হবে। তার আগে অন্তর্বর্তীকালীন স্টেট কাউন্সিল গঠন করা হবে। সাময়িক টেকনোক্র্যাট সরকারের তত্ত্বাবধান করবে এ কাউন্সিল। এর নিউক্লিয়াসে থাকবে প্রকাশ্যে পুতিনের ও তার অবৈধ সরকারের বিরোধিতাকারীরা, যারা নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়েছে। এ নির্বাসিতরা নিজেদের সংগঠিত করেছে। পশ্চিমা শক্তিবর্গের সহযোগিতায় তারা দ্রুত কাজ করতে পারবে। তাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন হবে নয়া রুশ সরকারের।

ফরেন পলিসি সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধটির শিরোনাম ডোন্ট ফিয়ার পুটিনস ডেমিজ : ভিক্টরি ফর ইউক্রেন, ডেমোক্র্যাসি ফর রাশিয়া। গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই নিবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, স্টেট কাউন্সিল ক্ষমতাগ্রহণের পর তড়িৎগতিতে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করবে ইউক্রেনের সঙ্গে। দেশটির ১৯৯১ সালের সীমান্ত মেনে নেবে। পুতিন পরিচালিত যুদ্ধের ক্ষতির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেবে ইউক্রেনকে। এ ছাড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রুশ জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সবপ্রকার সমর্থন সরকারিভাবে বাতিল করবে। এসব পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে পাশ্চাত্যের দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে, রাশিয়া যুক্ত হবে ইউরো-আটলান্টিক প্রতিষ্ঠানসমূহে।

নিবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার বেসামরিকীকরণ শুরু করবে স্টেট কাউন্সিল। সশস্ত্র বাহিনীর আকার কমিয়ে ফেলবে রক্ষণাবেক্ষণের অনুপাতে। এ ছাড়া পুতিনের ‘পুলিশি রাষ্ট্রের’ সব সংস্থাসহ বিলুপ্ত করা হবে ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ও সেন্টার ফর কমব্যাটিং এক্সট্রিমিজম নামক সংস্থা দুটিকে। পুতিন-আমলের সব আইন বাতিল করা হবে। ইউক্রেন আগ্রাসনের সমর্থক সব রাজনৈতিক দল ও জনসংগঠন বিলুপ্ত করা হবে, যাতে নতুন রাশিয়া নির্মাণে তারা বিঘ্ন ঘটাতে না পারে। স্টেট কাউন্সিল দেশের বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ করবে, এতে রাশিয়ার সর্বক্ষমতাময় সাম্রাজ্যবাদী কেন্দ্র দুর্বল হয়ে যাবে।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও পুতিনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিত করবে স্টেট কাউন্সিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষ সমর্থন করে নিবন্ধে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিয়েভের অনুকূলে জোয়ার সৃষ্টি করতে পারেন ট্যাংক ও দূরপাল্লার অস্ত্রের জোগান দিয়ে। তিনি পুতিনের মরণের পথও খুলে দিতে পারেন, সম্ভাবনা জাগাতে পারেন ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক রাশিয়ার। ইউক্রেনের প্রত্যাশার মাঝে কোনো আতঙ্ক দাঁড় করিয়ে দিতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।

ফরেন পলিসিতে প্রকাশিত নিবন্ধটির লেখক গ্যারি কাসপারভ ও মিখাইল খর্দকভ্স্কি। কাসপারভ সাবেক বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন। ২০০৮ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, পরে অংশ নেননি। এর পর সপরিবারে দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে বাস করতে থাকেন। ২০১৪ সালে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পান। এখন তিনি পশ্চিমাভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া রিনিউ ডেমোক্র্যাসি ইনিশিয়েটিভ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, এই দলের চেয়ারম্যানও তিনি। অ্যাভাস্ট নামক সফটওয়্যার কোম্পানির সিকিউরিটি অ্যাম্বাসাডর গ্যারি কারসপারভ।

অন্যদিকে রাশিয়ান অ্যাকশন কমিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মিখাইল খর্দকভ্স্কি। তিনি রাশিয়ার একজন সাবেক রাজনীতিক। উগ্রপন্থি হিসেবে পরিচিত ধনকুবের ব্যবসায়ী। দুর্নীতি, জালিয়াতি, অর্থপাচার ইত্যাদি অপরাধে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৫ সালে তার ৯ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৩ সালে পুতিনের মার্জনায় কারামুক্ত হয়ে অবিলম্বে দেশত্যাগ করে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। লন্ডনে পাড়ি জমান ২০১৫ সালে। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মিখাইল খর্দকভ্স্কির দলের নাম ওপেন রাশিয়া।

গ্যারি কাসপারভ ও মিখাইল খর্দকভ্স্কিকে বিদেশি চর হিসেবে মনে করে রাশিয়ান ফেডারেশন। দুজনের কেউই রাশিয়ায় জনপ্রিয় নন। অন্যদিকে রাশিয়ার আইনে ২০১২ সালে ‘বিদেশি চর সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত লেভাদা সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার নাগরিকদের মধ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তা ৮০ শতাংশেরও বেশি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877