শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টানা পরীক্ষার রুটিনে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা

টানা পরীক্ষার রুটিনে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা

স্বদেশ ডেস্ক: পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত চারটি পাবলিক পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। এতে দেখা যায়, পরীক্ষার মধ্যে বন্ধের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে আগের তুলনায়। যেমন গত বছর জেএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় ১৫ দিনে। এবার গ্রহণ করা হবে ১০ দিনে। এ বছর এইচএসসি লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এক মাস ১১ দিনে। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে এক মাস চার দিনে। একইভাবে কমানো হয়েছে আগামী এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সময়ও। আগে যেখানে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলত এসএসসি পরীক্ষা, বর্তমানে সেটি কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ২২ দিনে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে এ চিত্র দেখা যাচ্ছে।

অপর দিকে দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় বিরতিহীনভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে শিশুদের সমাপনী পরীক্ষা। আগামী পরীক্ষার রুটিনেও তা বহাল রাখা হয়েছে। এ বছর ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা আর চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। শুধু গণিতের আগে দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বিরতিহীনভাবে।

গত বছর সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ১৮ নভেম্বর, শেষ হয় ২৬ নভেম্বর। বিজ্ঞানের আগে এক দিন ও গণিতের আগে দুই দিন বন্ধ ছিল। প্রথম তিন দিন ও শেষের দু’টি পরীক্ষা টানা গ্রহণ করা হয়।

২০১৫ সালে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ২২ নভেম্বর, শেষ হয় ২৯ নভেম্বর। ওই বছর শুধু গণিতের আগে দুই দিন বন্ধ ছিল। অপর দিকে ২০১৪ সালে সমাপনী পরীক্ষার মধ্যে এক দিনও বন্ধ রাখা হয়নি। ২৩ নভেম্বর শুরু হয়ে টানা ছয় দিনে ছয়টি পরীক্ষা নেয়া হয়।

কয়েকজন অভিভাবক দীর্ঘ দিন ধরে টানা সমাপনী পরীক্ষার সূচির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের প্রতি এর চেয়ে নির্যাতনমূলক পরীক্ষা আর কিছু হতে পারে না। শুধু ভুক্তভোগী অভিভাবকেরাই জানেন শিশুদের এভাবে টানা পরীক্ষা নেয়া কত যন্ত্রণার।

রাজধানীর বনশ্রীর অভিভাবক মিলন বলেন, আমার মেয়ে গত বছর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। শিশুদের জন্য টানা পরীক্ষা গ্রহণ ভয়াবহ রকমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ছাড়া আর কিছু নয়। পঞ্চম শ্রেণী হলে কী হবে তাদের পড়ার পরিমাণ বলা যায় এসএসসির মতো। পরীক্ষার অনেক দিন আগে থেকেই দিন নেই রাত নেই শুধু পড়ার মধ্যে রাখা হয় মেয়েকে। ঠিকমতো ঘুমের অভাবে পরীক্ষার আগেই আমার মেয়ের চোখের চার দিকে কালি পড়ে। শরীর ক্ষীণ হয়ে যায়। এরপর পরীক্ষা শুরুর পর ইংরেজি, বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়- এ তিনটি পরীক্ষা টানা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার সময় মেয়ের করুণ অবস্থা আমাকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে। পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ না থাকায় একটি পরীক্ষা দিয়ে এসেই আবার পরের দিনের পরীক্ষার জন্য পড়া শুরু করতে হয়। কারণ বিশাল পড়া যদি পরীক্ষার আগে একটু রিভিশন দিতে না পারে তাহলে সারা বছরের পড়া তেমন কাজে লাগে না।

মিলন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত ছোট শিশুদের ওপর এভাবে টানা পরীক্ষার সূচি চাপিয়ে দিয়ে কেন তাদের এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারি না। তাদের প্রতিটি পরীক্ষার মধ্যে এক থেকে দুই দিন করে বন্ধ রাখা হলে দেশ ও জাতির কী এমন ক্ষতি হতো বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

মিলন বলেন, বড়দের পরীক্ষার মধ্যে বিরতি রাখা হয়; কিন্তু শিশুদের পরীক্ষার মধ্যে বিরতি রাখা হয় না। অথচ শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরীক্ষার মধ্যে বিরতি রাখা।

আগামী ২ নভেম্বর শুরু হবে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা। শেষ হবে ১১ নভেম্বর। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের আগে এক দিন করে বন্ধ। এ ছাড়া টানা চার দিন পরীক্ষা রয়েছে তাদের। ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১ নভেম্বর। শেষ হয় ১৫ নভেম্বর।
আগামী বছর ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২২ ফেব্রুয়ারি। ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ২৩ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষা শেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা। অথচ আগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলত এসএসসির লিখিত পরীক্ষা। যেমন ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষা চলে ৪ মার্চ পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা।

এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১ এপ্রিল। শেষ হয় ১১ মে। ১২ মে থেকে ২১ মে চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা। অপর দিকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১ এপ্রিল। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ৪ মে। ব্যবহারিক শেষ হবে ৫ থেকে ১৩ মের মধ্যে। চলতি বছরের চেয়ে সাত দিন কমেছে লিখিত পরীক্ষার সময়।

জেএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ কমিয়ে আনায় তীব্র ক্ষোভ এবং হাতাশা প্রকাশ করেছে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।

প্রশ্নফাঁস রোধ, দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকাসহ নানা কারণ দেখিয়ে পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁসসহ যত ধরনের নৈরাজ্য, অরাজকতা আর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা রয়েছে তার সব কিছুর জন্য বারবার শুধু খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের। প্রশ্নফাঁস রোধ করা সরকারের দায়িত্ব; কিন্তু প্রশ্নফাঁস রোধের জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর বিরতিহীন পরীক্ষা চাপিয়ে দেয়া ভয়াবহ রকমের নির্যাতন ছাড়া আর কিছু নয়। অনেক অভিভাবক বলেন, টানা পরীক্ষা গ্রহণের কারণে অনেকের পরীক্ষা খারাপ হয়। কারণ সারা বছর অনেক পড়ালেখা করেও বন্ধ না থাকার কারণে পরীক্ষার আগে ঠিকমতো রিভিশন দেয়া যায় না। টানা পরীক্ষা দিতে দিতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানের শিক্ষার্থীদের জন্য টানা পরীক্ষা গ্রহণ ভীষণ রকমের অবিচার বলে জানান অনেক শিক্ষক। টানা পরীক্ষা গ্রহণ না করা হলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালো করতে পারত।

তবে পরীক্ষায় খারাপ করার চেয়েও টানা পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মানসিক পীড়ন নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। প্রশ্নফাঁস রোধ আর বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকার অজুহাতে পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ কমিয়ে আনা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী। তাদের কেউ কেউ বরং সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877