বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

নিউ ইয়র্ক আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলা চালানোর বাধা দূর

নিউ ইয়র্ক আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলা চালানোর বাধা দূর

স্বদেশ ডেস্ক:

রিজার্ভ চুরির মামলা বাতিলের জন্য আসামিদের দু’টি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক আদালত। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলা চালাতে আইনগত বাধা দূর হয়ে গেল। দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ সোমবার এক বিবৃতিতে মামলার এই হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নিউ ইয়র্কের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ এক হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি আট কোটি ডলারের বেশি ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়। ওই অর্থ এখনো ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। ওই অর্থ উদ্ধারেই মামলা চলছে নিউ ইয়র্কের আদালতে।

গতকাল গণমাধ্যমের কাছে দেয়া বিএফআইইউ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট বা স্টেট কোর্ট ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন বা আরসিবিসি ও ছয় আসামির করা মামলা বাতিলের আবেদন গত ১৩ জানুয়ারি খারিজ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি এ মামলার অভিযুক্ত অপর আসামি কিম অংয়ের মামলা বাতিলের আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়। অভিযুক্তদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে মধ্যস্থতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্কের আদালতের এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলার অভিযুক্ত ফিলিপাইনের আরসিবিসি, কিম অংসহ ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা নেই।

বিএফআইইউ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্ক বা ফেডারেল আদালতে ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের ব্যাংক আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে এ মামলা করা হয়। পরে ওই মামলা বাতিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেডারেল আদালত ২০২০ সালের ২০ মার্চ মামলা বাতিলের ওই আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল আদালতের বদলে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেন।

ফেডারেল আদালতের ওই নির্দেশনার পর ২০২০ সালের ২৭ মে নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট তথা ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নতুন করে মামলা করে বাংলাদেশ। নতুন আদালতেও মামলা বাতিলের আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় আসামি। তাদের এ আবেদনের ওপর একাধিক দফায় শুনানি হয়।

এদিকে সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল। আরসিবিসির নিউ ইয়র্কের হিসাব এবং আরসিবিসির ফিলিপাইনের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না থাকলে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে এ অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। নিউ ইয়র্কের আদালত আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত আসামিদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে মধ্যস্থতারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে দেশের স্মরণকালের এ রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দু’জন ডেপুটি গভর্নরকে অপসারণ করা হয়। একইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এ রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তেও বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়। ঘণ্টায় ৪০০ ডলার করে এক হাজার ৪০০ ঘণ্টা তদন্ত করা হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাকেশ আস্তানকে দিয়ে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে আছেন। কিন্তু ওই ব্যয়বহুল তদন্ত আজো প্রকাশ করা হয়নি। রিজার্ভ চুরির পেছনে কারা দায়ী, তা বের করাও সম্ভব হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877