বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন

পাপ কাজের ঠিকানা জাহান্নাম….!!!

পাপ কাজের ঠিকানা জাহান্নাম….!!!

মুহাম্মাদ আবু আখতার: আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে পাপকাজের ভয়াবহ পরিণতি জাহান্নামের কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পর নবী-রাসুলদের অবর্তমানে নায়েবে নবী হিসেবে দ্বীনদার আলেমদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। নবী-রাসুল বা আলেমদের সতর্ক করা সত্ত্বেও যারা পাপ কাজ থেকে বিরত হয় না তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সেখানে তাদের আফসোসের কোনো সীমা থাকবে না। কিন্তু সে আফসোসে তাদের কোনো লাভ হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে। ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোনো সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহিরা জিজ্ঞেস করবেÑতোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা বলবে, হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। তারা আরও বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীর মধ্যে থাকতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামিরা দূর হোক।’ (সূরা মুলক: ৬-১১)।
সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ থেকে যারা গাফেল হয় তাদের সামনে শয়তান পাপকাজকে অত্যন্ত আকর্ষণীয়রূপে তুলে ধরে। ফলে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তারা বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়। কেয়ামতের দিন তাদের এজন্য আফসোস করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দিই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধাদান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত নিকৃষ্ট সঙ্গী সে।’ (সূরা যুখরুফ: ৩৬-৩৮)।
দান-সদকার ক্ষেত্রে অনেক মানুষ খুব কার্পণ্য করে। যারা আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করতে কার্পণ্য করে তারা মৃত্যুর পর এর অপরিসীম ফজিলত দেখে ফের এ দুনিয়ায় ফিরে এসে দান-সদকা করার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করবে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হবে না। তখন আফসোস করে কোনো লাভ হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।’ (সূরা মুনাফিকুন: ১০-১১)।
শেষ বিচারের দিন নিজের কৃত পাপকর্মের জন্য শয়তানকে ভর্ৎসনা করে কোনো লাভ হবে না। বরং শয়তানই পাপীদের ভর্ৎসনা করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন সব কাজের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের ওপর তো আমার কোনো ক্ষমতা ছিল না; কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না এবং নিজেদেরই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। এর আগে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরিক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা ইবরাহিম: ২২)।
বাপ-দাদার অনুসরণ করে, নেতার আনুগত্য করে কিংবা অন্য কারও অনুসরণ করে যারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের এজন্য অনুশোচনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের মহা অভিসম্পাত করুন।’ (সূরা আহযাব: ৬৭-৬৮)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আজাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সব সম্পর্ক। অনুসারীরা বলবে, কতই না ভালো হতো, যদি আমাদের পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদের অনুতপ্ত করার জন্য। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।’ (সূরা বাকারা: ১৬৬-১৬৭)।
কাফেররা দুনিয়ায় ইসলাম গ্রহণ না করার জন্য কেয়ামতের দিন অত্যন্ত আক্ষেপ ও অনুশোচনা করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কোনো সময় কাফেররা আকাক্সক্ষা করবে যে, কতই না ভালো হতো, যদি তারা মুসলমান হতো।’ (সূরা হিজর: ২)।
বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের মায়ায় পড়ে যারা অন্যায় করে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আজাব থেকে কেউই তাদের বাঁচাতে পারবে না। আল্লাহর আজাব এত ভয়ঙ্কর হবে যে, তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের একান্ত প্রিয় সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী-পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং পৃথিবীর সবাইকে মুক্তিপণ দিয়ে হলেও আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচতে চাইবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা এই আজাবকে অনেক দূরবর্তী বিষয় বলে মনে করে, আর আমি একে নিকটবর্তী দেখছি। সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মতো এবং পর্বতগুলো হবে রঙিন পশমের মতো, বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি মুক্তিপণস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভাইকে, তার আত্মীয়-স্বজনকে যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে। কখনোই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান আগুন, যা চামড়া তুলে দেবে। সে সেই ব্যক্তিকে ডাকবে যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও বিমুখ হয়েছিল। সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল, অতঃপর আগলিয়ে রেখেছিল।’ (সূরা মা’আরিজ: ৬-১৮)।
যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে হক্কুল্লাহ আদায় না করে অথবা অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর জুলুম করে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করে তারা তাদের জুলুমের জন্য আফসোস করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বলল, হায়! দুর্ভোগ আমাদের, আমরা অবশ্যই জালেম ছিলাম।’ (সূরা আম্বিয়া: ১৪)।
অন্য আয়াতে বলেন, ‘আমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা জালেম ছিলাম।’ (সূরা আম্বিয়া: ৯৭)।
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই কাফের বেঈমানরা তাদের কৃতকর্মের জন্য আক্ষেপ ও অনুতাপ করতে শুরু করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসুলরা সত্য বলেছিলেন।’ (সূরা ইয়াসিন: ৫২)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘তারা বলবে, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটাই তো প্রতিফল দিবস।’ (সূরা সাফ্ফাত: ২০)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877