সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে হচ্ছে জ্বালানি তেল

পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে হচ্ছে জ্বালানি তেল

স্বদেশ ডেস্ক: রাজারহাট উপজেলায় পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে মো. রোস্তম আলী নামে এক যুবক এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। ওই পেট্রল দিয়ে তিনি নিজের মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। আরও অনেকে এই পেট্রল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছেন মোটরসাইকেল।

রোস্তমের তরল জ্বালানি উৎপাদন পদ্ধতি ও জ্বালানি দেখতে প্রতিদিন উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। খবর পেয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ২৭ আগস্ট বিকালে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধানসহ বেশ কয়েক কর্মকর্তা রোস্তমের জ্বালানি উৎপাদন পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেন।

এ ব্যাপারে রোস্তম আলী বলেন, আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে প্রায় ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করা যায়। আমি পরীক্ষামূলক উৎপাদন করে ভালো ফল পেয়েছি। এতে পলিথিনের মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক বস্তু থেকে পরিবেশ রক্ষা পাবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আমি পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হব। আমি এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করি।

বালাকান্দি গ্রামের কৃষক মফিজুল হকের পুত্র রোস্তম আলী বাড়ির উঠানে একটি আবদ্ধ তেলের ড্রামে বেশকিছু পরিত্যক্ত পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে তাপ দিয়ে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করছেন।

রোস্তম আলী আরও জানান, ছোটবেলায় শীতকালে ঠা-া থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো দিয়ে বাড়িতে আগুন পোহাতেন। সেখানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পোড়ানো যেত। পলিথিন পুড়ে তরল পদার্থের মতো হতো। কিন্তু সেটি পরিবেশবান্ধব ছিল না। আর তরল পদার্থটি কী সেটিও জানতেন না। ২০১৭ সালের দিকে একদিন টিনের ছোট কৌটায় পলিথিন পুড়িয়ে তরল পদার্থ বের করেন। শোধন করে পরীক্ষা করে দেখতে পান, সেগুলো ডিজেল ও পেট্রল জাতীয় তরল পদার্থ। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক পরিত্যক্ত পলিথিন যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে একটি ড্রামে রেখে অতিমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করে গলিয়ে ফেলেন। সেখান থেকে বাষ্পায়িত হয়ে ডিজেল এবং নল দিয়ে বের হয়ে পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন হয়। সর্বশেষ পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হয়। সেখানে আগুন দিলে আগুন জ্বলে ওঠে।

রোস্তম আরও জানান, তাপমাত্রা যত বেশি দেওয়া হয়, তত বেশি তরল পদার্থ নির্গত হয়। সেই সঙ্গে বের হয় গ্যাস। এসব সংগৃহীত তরল পদার্থ দুটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এক ছাঁকন পদ্ধতি, দুই থিতানো পদ্ধতি। রোস্তমের দাবি, এ তরল পদার্থগুলো হাইড্রোকার্বন এবং এগুলোর ধর্ম ও বর্ণ ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন এবং নির্গত গ্যাস এলপি গ্যাসের মতো। তাই এগুলো ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও এলপি গ্যাস। এখনো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সুযোগ না পেলেও প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করেছেন রোস্তুম।

রোস্তম আলী ছোটবেলা থেকেই গবেষণায় আগ্রহী। তিনি ২০১৩ সালে পান্থাবাড়ী বালাকান্দি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। অভাবের কারণে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। পরে ভর্তি হন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে। ২০১৭ সালে ডিপ্লোমা পাস করে অনলাইন কোর্সে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশের (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে সেখানে অধ্যায়নরত। এ ছাড়া সংসারের হাল ধরতে প্রাইভেট টিউটর হিসেবেও কাজ করছে। পাশাপাশি চলছে তার গবেষণা। পরিবেশবান্ধব পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক থেকে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও এলপি গ্যাস উৎপাদন ছাড়াও উচ্ছিষ্ট পলিথিনের ছাইকে ফটোস্ট্যাট মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার পদ্ধতি উদ্ভাবনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পান্থাবাড়ি বালাকান্দি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনেশ্বরচন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, রোস্তম আলী আমাদের ছাত্র ছিল। আমরাই ভাবতে পারিনি, সে এতবড় উদ্ভাবক হবে। সে অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধান বলেন, রোস্তম আলীর পলিথিন পুড়িয়ে পেট্রল উৎপাদনের বিষয়টি দেখলাম। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তিনি সহযোগিতা চাইলে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877