স্বদেশ ডেস্ক:
ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহৎ পরিসরে কাজ করা হচ্ছে। ভারত থেকে ইতোমধ্যে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। আর ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় দেশটির বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি পাওয়ারের নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ।
এসব তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আজ মঙ্গলবার ভারতের ঝাড়খণ্ডের নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে বাংলাদেশ ১৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। এই বিদ্যুতের পুরোটা পেতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঝাড়খণ্ডে নির্মাণাধীন আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ পরিদর্শন করেন নসরুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সর্দানাসহ আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা।
নসরুল হামিদ বলেন, ঝাড়খন্ডে নির্মাণাধীন আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মার্চ থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। মার্চের মাঝামঝি সময় থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে সরবরাহ করার লক্ষ্যে আদানি পাওয়ার লিমিটেড ঝাড়খণ্ডে দুই ইউনিটের মোট ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এর প্রথম ইউনিটের কাজ পুরোপুরি শেষ। আগামী জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী গ্রীষ্মের চাহিদা পূরণে আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। জ্বালানির বিকল্প উৎসও আমরা খুঁজছি। সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি।’
বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষর হয় ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর। চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ার লিমিটেড ঝাড়খণ্ডে ১৬০০ (২*৮০০) মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্য সঞ্চালনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম কত হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা পুরো একটা প্যাকেজ। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সঞ্চালন লাইন নির্মাণও যুক্ত। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার যে দাম, তাতে ১৪ থেকে ১৭ সেন্ট হবে। ডলার রেট ১০০ টাকা হিসাব করলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পরবে ১৭ টাকা।’
তবে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘এই দাম ফিক্সড নয়, কয়লার দাম কমলে বিদুতের দামও কমবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের পায়রা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দামও প্রায় ১৬ টাকা।’
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আদানি বাংলাদেশের বগুড়া পর্যন্ত গ্রিড লাইন নির্মাণ করেছে। একই লাইনে আরও এক হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে আদানি পাওয়ার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করে ভারত থেকে কেন আমদানি—এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করতে এক হাজার একর জমি, কোল টার্মিনাল, পরিবহন, দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ও পরিবেশ সংক্রান্ত অনেক জটিলতা আছে। আমরা এসব বিবেচনা করে এখান থেকে আমদানি করছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরাও বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছি। তবে বিকল্প অনেক সোর্স থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ তরে ভারতের সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘আগামীকাল দিল্লিতে ভারতের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নেপালে বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ, ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানি, বিশেষ করে আসাম থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, খুলনা দিয়ে একটি ডেডিটেকেট এলএনজি পাইপলাইন স্থাপন, ভারত থেকে বৃহৎ পরিসরে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সর্দানা বলেন, ‘বিদ্যুৎ না দিয়ে আদানি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেবে না। এটা ভারতের সবচেয়ে আধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিশ্বের যে দেশ থেকে ভালো দামে কয়লা আমদানি করা যায়, সেই দেশ থেকেই আমরা আমদানি করব।’
অনিল সর্দানা আরও বলেন, ‘ভারতের নীতি হচ্ছে নিজ দেশের কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অন্য দেশে রপ্তানি করা যাবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া—যেখান থেকে সুবিধা কয়লা আমদানি করা হবে।’