রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

মদিনার মর্যাদা……!

মদিনার মর্যাদা……!

মাওলানা দৌলত আলী খান: মদিনার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব মুসলিম উম্মাহর নিকট দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। মদিনা মদিনার আলোকেই মর্যাদাময়। মদিনায় সর্বপ্রথম আজানের প্রবর্তন হয়। মদিনা থেকে ঐতিহাসিক বদর, ওহুদসহ অসংখ্য যুদ্ধ পরিচালনা করেন নবী করিম (সা.)। মদিনাই ইসলামী শক্তি নিকেতন হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এতে হিজরত করার জন্য নবীজি (সা.) আল্লাহর নির্দেশ প্রাপ্ত হন। মদিনার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল এলাকাজুড়ে মসজিদে নববি। এতে রয়েছে সাহাবাদের পাঠদান কেন্দ্র ঐতিহাসিক সুফফা মাদ্রাসা। এভাবে মদিনার অসীম মর্যাদার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। এর বৈশিষ্ট্যের বর্ণনার অন্ত নেই। মদিনাই একমাত্র মুসলিম উম্মাহর মোহনীয় পুণ্যভূমি।
মদিনা মানুষকে বিশুদ্ধ করে: মদিনা একটি পবিত্র স্থান। এটি অপবিত্রকে কোনোভাবেই গ্রহণ করে না। মদিনার তেজোদীপ্ত পরিবেশে কেউ অন্যায় কাজে জড়িত হতে পারে না। কোনো অসভ্য লোক এর ভূখ-ে বিচরণ করতে পারে না। মদিনা মন্দ লোকের আবাস ভূমি নয়, বরং নবীপ্রেমীদের মিলনকেন্দ্র। কারণ, মদিনা মানুষকে বিশুদ্ধ করে এবং আলোকিত জীবনের সবক প্রদান করে। মদিনার ছোঁয়ায় মোমিনের অন্তর থেকে অন্ধকার দূরীভূত হয় আর ঈমানি প্রদীপ হয় দীপ্তিময়। এটাই মদিনার ঐতিহাসিক মর্যাদাময় বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, আমি এমন এক বস্তিতে হিজরতের জন্য আদিষ্ট হলাম যে বস্তি অন্য বস্তিগুলোকে গ্রাস করবে। লোকে বলে তাকে ইয়াসরিব আর তা হলো মদিনা। মদিনা মানুষকে বিশুদ্ধ করে যেভাবে হাঁপর খাদ ঝরিয়ে লোহাকে বিশুদ্ধ করে। (বোখারি: ১৯০৪)। আরও বলেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মদিনা তার মন্দ লোকদেরকে দুর করে দিবে না; যেভাবে দূর করে দেয় হাপর লোহার খাদকে। (মুসলিম: ৩৪১৮)
দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না: কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব একটি ভয়ঙ্কর আলামত। দাজ্জাল সব জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করবে। কিন্তু পৃথিবীর দুটি পবিত্র ভূমিতে দাজ্জালের আধিপত্য চলবে না; আর তা হলো মক্কা ও মদিনা। মদিনার দ্বারগুলোয় ফেরেশতারা পাহারায় থাকবে। এ ফেরেশতারা দাজ্জালের মদিনা প্রবেশ রুখে দিবে। দাজ্জাল কোনোভাবেই মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। পবিত্র মদিনা অপবিত্র কাফের দাজ্জালের প্রবেশকে কখনও সহ্য করবে না। এটি মদিনার গৌরবময় মর্যাদাগুলোর মধ্যে অনন্য। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, মদিনার দ্বারগুলোয় ফেরেশতারা পাহারায় রয়েছে। সুতরাং তাতে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। (বোখারি : ১৯১৩)। রাসুল আরও বলেন, মদিনায় কানা দাজ্জালের প্রভাব পৌঁছবে না। তৎকালে মদিনার সাতটি দরজা হবে এবং প্রত্যেক দরজায় দুইজন করে ফেরেশতা মোতায়েন থাকবে। (বোখারি: ১৯১২)।
নবীজির রওজার জিয়ারতকারী সুপারিশপ্রাপ্ত হবে: কবর জেয়ারত সাধারণত সুন্নত। এতে কবরবাসীর গুনাহ ক্ষমা হয় এবং নাজাত লাভ হয়। তবে নবীজি (সা.) এর রওজা মোবারক জেয়ারত করার মধ্যে বিশেষায়িত রয়েছে। যারা নবী করিম (সা.) এর কবর জিয়ারতের উদ্দেশে মদিনা পাড়ি জমাবে কেয়ামত দিবসে তারা নবীজির পাশে থাকবে। এ নৈকট্য লাভের জন্য প্রতিদিন নবীজির উম্মতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে মদিনার পানে ছুটে যান। এছাড়াও যারা হজ করতে গিয়ে নবীজির রওজার জেয়ারত করে তাদের নবী করিম (সা.) এর সরাসরি সাক্ষাৎ লাভের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যে শুধু আমার জেয়ারতের উদ্দেশে এসে আমার জেয়ারত করবে, কেয়ামতের দিন সে আমার পাশে থাকবে। (মেশকাত: ২৬৩৫)। রাসুল আরও বলেন, যে হজ করেছে, অত:পর আমার জেয়ারত করেছে আমার ইন্তেকালের পরে, সে হবে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে আমার জীবনে আমার জেয়ারত করেছে (বাইহাকি)।
মদিনায় মৃত্যুবরণের ফজিলত: মদিনার মাটিতে শুয়ে আছেন আখেরি নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। এ মাটি কতই না ধন্য। রাসুল (সা.) এর শহর মদিনায় মৃত্যু নসিবের জন্য হজরত ওমর (রা.) সর্বদা আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন এবং নবীজির পাশেই ওমর (রা.) কে কবরস্থ করা হয়। তাই প্রত্যেক মোমিনকে স্বীয় মৃত্যু মদিনায় হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা উচিত। মদিনায় মৃত্যু হওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে জীবন গড়াও সওয়াবের কাজ। কারণ হাদিসে আছে, মদিনায় মৃত্যু বরণকারী মোমিন কেয়ামতের দিন নবীজির সুপারিশ প্রাপ্ত হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যে মদিনায় মরতে পারে সে যেন তাতে মরে। কেননা, যে মদিনায় মরবে আমি তার জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করব। (তিরমিজি: ৩২৩১)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877