সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

নাজুক অবস্থায় ৯ ব্যাংক, ঋণের অর্ধেকই খেলাপি

নাজুক অবস্থায় ৯ ব্যাংক, ঋণের অর্ধেকই খেলাপি

স্বদেশ ডেস্ক: নাজুক অবস্থানে সরকারি-বেসরকারি খাতের ৯ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর আদায় কমে যাওয়ায় ও ঋণকার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হওয়ায় তাদের কোনোটির আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এর কোনো কোনোটি মূলধন ভেঙে নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয় সংস্থান করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি, একটি বিদেশী ও বাকি চারটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানাতে চিঠি দেয়া হবে। একই সাথে আগামী তিন মাসে কিভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায় সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে নির্দেশ দেয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে গত ৩০ জুনের ভিত্তিতে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, বর্তমানে পদ্মা নাম ধারণকারী সাবেক ফারমার্স ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা খুবই নাজুক। যেমন আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১০০ টাকা ঋণের মধ্যে প্রায় ৮৩ টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮১ টাকাই আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ৮৫৫ কোটি টাকা মোট ঋণের মধ্যে ৭০৭ টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক নাম ধারণকারী সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ১০০ টাকায় ৬৬ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৫৩ টাকাই আদায় অযোগ্য অর্থাৎ কুঋণ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মোট ৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩ হাজার ৬১১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটি বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্র খাতের পাঁচটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মূলধন যোগান দেয়া হয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১০০ টাকা ঋণের মধ্যে জুন শেষে প্রায় ৪৫ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। অথচ গত মার্চ শেষে ছিল ৩২ শতাংশ। পরিসংখ্যান থেকে মন্দ ঋণের কারণে আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকটি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। জুন শেষে প্রায় ৫১১ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে। বেসরকারি খাতের অপর ব্যাংক এবি ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের জুন শেষে ২৮ দশমিক ১১ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। আয়ে সংস্থান না হওয়ায় জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

এ দিকে সরকারি খাতের ৬টি ব্যাংকের মধ্যে চারটির বিতরণ করা অর্ধেকের বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। যেমন বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৬১ শতাংশ। ব্যাংকটির বিতরণ করা ১৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৫৮ শতাংশ। ব্যাংকটির আয়ে সংস্থান না হওয়ায় জুন শেষে ৩ হাজার ৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে। প্রায় ৫৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে ধুঁকছে সরকারি খাতের আরেকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ৮৯০ কোটি টাকাই খেলাপি। এর মধ্যে ৮৫১ কোটি টাকাই আদায় অযোগ্য, অর্থাৎ মন্দ ঋণ। যা মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৩ শতাংশ।

অপর দিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ কেলেঙ্কারির সংবাদে শীর্ষে থাকা জনতা ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৪৩ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত প্রায় সাড়ে ৪৯ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকাই আদায় অযোগ্য বা মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে ৩৮ শতাংশ। অপর দিকে, সাড়ে ২৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে ধুঁকছে রাষ্ট্র খাতের বৃহৎ ব্যাংক সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা মোটে ঋণের মধ্যে ১২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের অভ্যাস এবং ঋণ অবলোপন করার প্রবণতা বেড়েছে। এতে ব্যাংক খাতে চাপ সৃষ্টি করছে। ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের ব্যাংকিং খাত যদি ক্ষতি হয়, তাহলে শুধু দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডই নড়বড়ে হবে না, পুরো অর্থনীতিকে এর খেসারত দিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। এতে এ অবস্থা সামাজিক বিপর্যয়ের দিকে গড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877