স্বদেশ ডেস্ক:
ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যায় আসামিরা কীভাবে সম্পৃক্ত ছিল তা ভিডিওর মাধ্যমে দেখানো হবে। গতকাল রোববার মামলার ৩৬তম দিনে ৯২ নম্বর সাক্ষী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনী শাখার পরিদর্শক মো. শাহ আলম তার স্বাক্ষ্য প্রদানের পর পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিতে চাইলে আদালত তা গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করেন।
গতকাল ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদের আদালত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পিবিআইয়ের ফেনী শাখার পরিদর্শক মো. শাহ আলম ছাড়াও সাক্ষ্য দেন নুসরাতের মৃত্যুসনদ প্রদানকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) চিকিৎসক ওবায়দুল ইসলাম।
যদিও শাহ আলমের সাক্ষ্য প্রদান পুরোপুরি শেষ হয়নি। সেটি সম্পূর্ণ করতেই পাওয়ার পয়েন্ট ও নুসরাতের দেওয়ার জবানবন্দির ভিডিও তিনি আদালতের সামনে তুলে ধরে নিজের সাক্ষ্য শেষ করবেন। তিনি উল্লেখ করেন, নুসরাতের হত্যাকাণ্ডে আসামিদের উল্লাস, তাদের কথপোকথন, নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেখানো হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলমের জবানবন্দি অংশিক শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষ্যগ্রহণে তিনি ভিডিও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে আসামিদের উল্লাস, কথপোকথন এবং মৃত্যুর আগে নুসরাতের কাছ থেকে নেওয়া জবানবন্দি দেখাতে চেয়েছেন। আদালতের কাছে অনুমতি চাইলে তিনি রাজি হয়েছেন। আদালতে তা প্রদর্শনের অনুমতিও দিয়েছেন।’
আইনজীবী শাহজাহান সাজু আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এটিই প্রথম মামলা, যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ডের সকল বিষয়াদি দেখানো হবে। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলমকে জেরা করবেন।’
নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্য কার্যক্রম শেষের দিকে উল্লেখ করে সাজু আরও বলেন, ‘অভিযোগপত্র প্রদানকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ফেনী শাখার পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সাক্ষ্য পুরোপুরি শেষ ও তাকে জেরা করার পর যুক্তিতর্ক শুরু হবে। মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার এজাহারেও ৯২ জন সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের আদালতে ডাকা হলে চারজন আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘তারা উপস্থিত না হতে পারলেও ডকুমেন্টারি হওয়ার কারণে আদালতে উপস্থিত না হলেও সাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন।’ তাদের পক্ষে আদালতে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
এ বিষয়ে কথা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ মামলার সাক্ষ্য আইনের বিধান অমান্য করে তারা ডিজিটাল পদ্ধতি ভিডিও দেখাবেন। এসব কিছু একতরফাভাবে করছে। আসামিদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য দুরভিসন্ধিমূলক এসব কাজ করছে।’
এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও বাবা মাওলানা একেএম মুসাসহ ৯১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।