শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

চীনের হঠাৎ যুদ্ধপ্র্রস্তুতি

চীনের হঠাৎ যুদ্ধপ্র্রস্তুতি

মো: বজলুর রশীদ:

‘বাড়তি অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা’ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চীনের সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের প্র্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শি জিনপিং। সম্প্রতি বেইজিংয়ে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড সেন্টারের সদর দফতর সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট এই নির্দেশনা দেন। চীন এখন তার সামরিক প্রশিক্ষণ এবং যেকোনো যুদ্ধের প্রস্তুতিকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে তুলতে শুরু করেছে। শি বলেন, ‘সামরিক সংগ্রামের কাজটি কঠিন এবং ভারী।’

চলতি মাসের ৮ নভেম্বর জনাব শি বলেন, ‘সমগ্র সামরিক বাহিনীকে দক্ষ করাই এখন মৌলিক এবং একমাত্র মানদণ্ড ধরে সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে। জয়ের ক্ষমতা অর্জনের গতি বাড়াতে হবে।’ সম্ভাব্য তাইওয়ান যুদ্ধকে লক্ষ্য করেই শি এসব কথা বলছেন মনে হয়। ন্যান্সি পেলোসির সফর, কানাডার ক‚টনীতিক ও ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী গ্রেগ হ্যান্ডসের তাইওয়ান সফর ও নানা চুক্তি চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে বলে বেইজিং মনে করছে। শি অনুগতদের নিয়ে নতুন সহযোগী দল গঠন করেছেন। এই দল বেইজিং বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিক্রমা ছাড়াও সামরিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দিকে সবিশেষ মনোযোগ দিয়েছে।

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে ইন্দো-প্যাসিকিক অঞ্চলে শান্তির পরিবর্তে হুঙ্কারের উত্তপ্ত উল্কাকণা বর্ষিত হয়েছে। জো বাইডেন বলেছেন, ‘তাইওয়ানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’ চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘শক্তি প্রয়োগ করার জন্য চীন প্র্রস্তুত।’ এসবের মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রও পৃথকভাবে কোয়াড সামরিক মহড়া শুরু করেছে, যা এক কথায় ভয়াবহ। জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্স এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী গত ৩ নভেম্বর জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপগুলোতে এবং তার আশপাশে বড় আকারের যৌথ মহড়া শুরু করেছে। কিন সোর্ড, Keen Sword নামে এই মহড়া চলতি মাসের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে, জাপানের সেনাবাহিনী ও দশ হাজার মার্কিন সেনাসহ প্রায় ২৬ হাজার কর্মী মহড়ায় অংশ নিয়েছে।

নাজুক দ্বীপগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্পে টিল্টরটার বিমান রাখা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ব্রিটেন থেকে চারটি যুদ্ধজাহাজ এবং দু’টি বিমানও এই মহড়ায় যোগ দেবে। জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে যথাক্রমে ২০ ও ১০টি জাহাজ, ২৫০ ও ১২০টি বিমান অংশ নিয়েছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জবাব দেয়ার পাশাপাশি মহাকাশ ও সাইবার স্পেসের মতো নতুন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও চীন প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে বলে ‘Keen Sword’ দফতর জানিয়েছে। টোকিও এবং ওয়াশিংটন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বেইজিংয়ের সামুদ্রিক দৃঢ়তায় অস্থির হয়ে পড়েছে, ওকিনাওয়ার পর সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে জাপানি জলসীমায় চীনা জাহাজগুলো ঘোরাফিরা করছে এতে জাপান বিচলিত। পূর্ব চীন সাগরে জাপান-দাবিকৃত জনবসতিহীন দ্বীপপুঞ্জগুলো চীনও দাবি করেছে, কয়েকটি রাশিয়াও দাবি করেছে।

ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রলিয়ার ‘কোয়াড’ দেশগুলোও পূর্ব চীন সাগরের কাছে মালাবার নৌমহড়া শুরু করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের তৎপরতা তাদের রাডার স্ক্রিনে প্রত্যক্ষ করছে। ভারত ১০ দিনের মালাবার মহড়ার জন্য মাল্টি-রোল স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস শিবালিক, অ্যান্টি-সাবমেরিন কর্ভেট আইএনএস কামোর্তা এবং একটি পি-৮আই দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল বিমান মোতায়েন করেছে যা সমন্বিত অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে। মার্কিনিরা পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান, গাইডেড মিসাইল ক্রুজার ইউএসএস চ্যান্সেলরসভিল এবং এজিস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস মিলিয়াসকে মাঠে নামিয়েছে। মহড়ায় অস্ট্রেলিয়া ও জাপান সমমানের আধুনিক সমরাস্ত্র জড়ো করেছে।

বর্তমানে ৩৫৫টি যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী হয়েছে চীন। মালাবারের বিরুদ্ধে চীন প্রতিবাদ করলে ‘শান্তি ও গণতন্ত্রের অক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’ বলে জবাব দেয়া হয়েছে। ‘কোয়াড’ সম্মিলিতভাবে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিককে সমর্থন করে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাজসাজ রবে চীনের নিরাপত্তা ক্রমেই অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে মর্মে শি চীনাদের সতর্ক করেছেন।

বেইজিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, প্রয়োজন হলে জোরপূর্বক স্বশাসিত দ্বীপটি পুনরায় দখল করা হবে। চীন বলেছিল তারা কোনো তাড়াহুড়া করতে চায় না কিন্তু পরিস্থিতি চীনকে তাড়োহুড়া করতে বাধ্য করছে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া চুক্তি, অকাস-কোয়াডের গঠন, তাইওয়ানকে সমরাস্ত্রের দুর্গে পরিণত করা, তাইওয়ান কর্তৃক মিজাইল ও ড্রোন শিল্প সমপ্রসারণে বৃহৎ শক্তির সহায়তা ও বাণিজ্যিক সমঝোতা সবই চীনের বিরুদ্ধে পাল্লা ভারী করে চলেছে। তাই চীন ধীরে চলার নীতির পরিবর্তন করছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিদের তাইওয়ানকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতার ফলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি, পিএলএ কমান্ড সেন্টারে ‘যুদ্ধের জন্য প্র্রস্তুতি’ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তাইওয়ানের প্রতি চীনের আক্রোশ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চীন তাইওয়ান থেকে প্রয়োজনীয় ও কিছুটা অপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন আনারস ও বিবিধ সামগ্রী আমদানি করত। যাতে তাইওয়ানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। সেখানে প্রায় সব ধরনের আমদানি চীন বন্ধ করে দিয়েছে। চীন তাইওয়ান থেকে প্রচুর সাইট্রাস ও মাছ আমদানি করত, ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর, সেগুলো নিষিদ্ধ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় চীন তাইওয়ানে বালু রফতানিও বন্ধ করে দিয়েছে। বিস্কুট, কনফেকশনারিসহ অন্যান্য পণ্যেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাইওয়ানের রফতানির প্রায় ৩০ শতাংশই চীনে হয়ে থাকে। তাইপের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হলো বেইজিং। আমদানি-রফতানি নিষেধাজ্ঞায় তাইওয়ানের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের পক্ষে পুশিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।

সা¤প্রতিককালে পিপলস লিবারেশন আর্মি, পিএলএ প্রয়োজনকে সামনে রেখে তাইওয়ানে সামরিক আগ্রাসন চালানোর জন্য শত শত যুদ্ধবিমান প্র্রস্তুত রেখেছে। গত বছর, অক্টোবরে এক দিনে ৫৬টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল। স¤প্রতি, ট্রাক, যুদ্ধ ট্যাংক ও সাঁজোয়া যুদ্ধ যানবাহন, বেসামরিক বন্দরগুলোতে এএফভির একটি বিশাল সামরিক কনভয়ের ঢুকে পড়ার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো তাইওয়ানের প্রতি চীনের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত চীনের দূত জিয়াও কিয়ান বলেছিলেন, বেইজিং দ্বীপটিকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য ‘প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায়’ ব্যবহার করতে প্র্রস্তুত। আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘সেখানে সত্যিকারের হুমকি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সাই সশস্ত্র বাহিনীকে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাপের হুমকির দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেছেন। তাইওয়ান মনে করে, এক বছরের মধ্যে ড্রোনের একটি অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইন তৈরি করা যা তার সামরিক বাহিনী চীনের সাথে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। ‘যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনের মতো তাইওয়ান প্রণালীতে সঙ্ঘাতের প্র্রস্তুতির তাৎক্ষণিকতা এবং এ ধরনের সঙ্ঘাতে ড্রোন যে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে তা আক্রমণ প্র্রস্তুতিতে যুক্ত করা। তাইওয়ান এবং ইউক্রেন একই রকম রাজনৈতিক হুমকির মুখোমুখি এবং তাদের বৃহৎ প্রতিবেশীরা নিজেদের রাজকীয় সম্পত্তি হিসাবে পরিচালনা করতে চায়। পুতিন যেমন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের বিলোপকে তার রাজনৈতিক প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন, তেমনি শি চীনও তাইওয়ানকে একীভ‚ত করার অঙ্গীকার করেছেন। এদিকে, তাইওয়ান তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য কাজ করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক সামরিক সম্পদ এবং অস্ত্র কিনছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুবার তাইওয়ানকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পশ্চিমা শক্তি রাশিয়াকে দুর্বল করার জন্য ইউক্রেন-ঘোড়া দৌড়াচ্ছে আর চীনকে দুর্বল করার জন্য ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’ পরাস্ত হয়ে ইউক্রেনের মতো জাপান-অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বলয় তৈরি করছে। চীন অনেক আগ থেকেই এই ত্রিশক্তিকে মোকাবেলা করার ছক করে রেখেছে। এখন প্রশ্ন হলো ইউক্রেন যেমন ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ক্ষেত্রে সেটি কি রূপ পরিগ্রহ করবে? চীনের সাথে যুদ্ধে কি ভারত ইউক্রেনের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে? ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রমনিয়াম জয়শঙ্কর গত জুনে সিএনএন নিউজে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মোদি সরকারের গত আট বছরে পররাষ্ট্রনীতি ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুশাসনের পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন কোনো শিবিরেই নেই। রাশিয়া-ভারত একসাথে অস্ত্র তৈরির প্রকল্প নিয়েছে সম্প্রতি। নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত। এর আগে ইরান থেকেও অবরোধের ভেতর তেল কিনেছে দেশটি। ইউক্রেন বিষয়েও ভারত স্বাধীনভাবে নীতি পরিচালনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র বিরক্ত হলেও ভারতের এসব উদ্যোগে চুপ করে আছে, কেননা চীনকে আঘাত করতে ভারতকে খুব প্রয়োজন। আমেরিকার সমরবিদরা বলেছেন, সমুদ্রের চেয়েও স্থল পথে চীনকে আঘাত করা গুরুত্বপূর্ণ, ভারত ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এর মধ্যে লাদাখে, চীন সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত গুরুত্বপূর্ণ মহড়া শেষ করেছে। ‘ভারত কারো শিবিরে নেই’ বক্তব্য কি ঠিক?

চীনের ক্রমবর্ধমান জাতীয় শক্তি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বলয় ইউরোপ থেকে পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরিত করার পেছনে চীন একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। ভ‚রাজনৈতিক বিষয়ে চীনকে বাদ দিয়ে কথা বলার দিন ফুরিয়ে গেছে। এই প্রচেষ্টা বা ‘শিফট’ এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায় এক প্রবাহ সৃষ্টি করেছে।

চীনের এই মর্যাদায় যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চিন্তিত এবং উভয় দেশ আন্তর্জাতিক ‘শৃঙ্খলা’ ও ‘শান্তি’ স্থিতিশীল রাখতে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। সা¤প্রতিক এক ঘোষণায় তারা বলেছে, ‘আমরা তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বকে জোর দিচ্ছি এবং ক্রস-স্ট্রেইট সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানকে উৎসাহিত করছি।’ এই কথার পরই লেখা হয়েছে ‘আমরা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধের গুরুত্বও স্বীকার করি’। অর্থাৎ তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উভয় দেশ চীনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। পুরো রিপোর্টে আরো আরো গুরুত্বপূর্ণ শব্দচয়ন করা হয়েছে যেমন- ‘সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে। জাপানের রাজনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, এই বিবৃতিতে চীন অনিবার্যভাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে এবং এমন ঘোষণার ফলে চীনের সংযমের বাঁধ ভেঙে যাবে। চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতায় চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রতিবেশীদের সাথে চীনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে মন্তব্য করার সময় তালিকার শীর্ষে রাখেন জাপানকে, এরপর ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া স্থান পায়।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘চীন শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথেই থাকলেও, বৈধ অধিকার কখনো ত্যাগ করবে না, মূল স্বার্থ বিসর্জন দেবে না।’ শি ভালোভাবেই জানেন, মার্কিন-জাপান জোট জাপানি ক‚টনীতির মূল ভিত্তি। তাইওয়ান প্রণালীতে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনা বাড়িয়ে জাপান কিভাবে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করবে তার ব্যাখ্যা জানতে চায় চীন। চীন কি এই খেলায় তাইওয়ান প্রণালী নিয়ে ব্যস্ত থাকবে নাকি সাগরের শেষ সীমায় জাপানের সীমান্তে চীনের নৌবাহিনীর আক্রমণ ব্যূহ রচনা করবে সেটি সামনে চলে এসেছে। তাইওয়ানে আসার আগেই জাপানকে তার নিজস্ব জলসীমায় ও দ্বীপগুলোতে চীনা নৌবাহিনীর মোকাবেলা করতে হবে। সেই ব্যবস্থা চীন করছে। চীনের বিমানবাহী জাহাজ লিয়াওনিং ইতোমধ্যে মিয়াকো প্রণালী হয়ে ওকিনাওয়া বরাবর অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা দেয়ার আগেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরকেও আক্রমণ করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ‘প্রধান দেশ’ হিসেবে চীনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এবং বিশ্বাস করেন ‘বিশ্ব শান্তির বিষয়গুলোতে নির্ণায়ক প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা চীনের রয়েছে।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877