স্বদেশ ডেস্ক:
চলনবিল অঞ্চলে বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে গোচারণ ভূমি ও ঘাসের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে চলনবিল এলাকায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট। ফলে গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও পশুপালনকারীরা। এ ছাড়া ভাটি এলাকায় গোখাদ্যের সঙ্কট বেশি হওয়ায় খামারিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশি দামে খড় কিনে নৌকা ও সড়ক পথে নিয়ে যাচ্ছেন ভাটির দিকে। এদিকে খড়ের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক গরু-মহিষের মালিকরা।
চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকা এখনো বর্ষার পানিতে ডুবে আছে। মাঠের পর মাঠ এখনো পানির নিচে। এতে জমিতে কেউ ঘাস বপন করতে পারছেন না। এতে করে এ অঞ্চলে গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব উপজেলার খামারি ও পশু পালনকারীরা।
এদিকে স্থানীয় খড় ব্যবসায়ীরা গোখাদ্যের সঙ্কটের কারণে বোরো ধানের খড় রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ দেশের উঁচু এলাকার জেলাগুলো থেকে কিনে সড়ক ও নৌপথে নিয়ে আসছেন। এতে চলনবিল অঞ্চলে খড়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রতি ১০০ আঁটি ধানের খড় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা, কলাগাছ ও বিভিন্ন গাছের লতা-পাতাসহ অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। পাশাপাশি গাভি গরুর দুধ উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত গাভি মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার তিনটি গরুর ফার্ম রয়েছে। প্রতি মণ খড় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। খইল ভূষির দামও অনেক বেড়েছে। বাধ্য হয়ে বিল ও নদী থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে খাওয়াতে হচ্ছে। এতে গবাদিপশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরুর দুধ উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গবাদিপশু পালন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গুরুদাসপুর থানা সদরে বঙ্গবন্ধু কলেজ রোডের উত্তর নারিবাড়ি খামারি আব্দুর রহিম খান জানান, তার খামারে অনেকগুলো গরু ও ছাগল ছিল। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। যে কারণে প্রায় সব গরু-ছাগল বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ১০টি বিদেশী ছাগল আর গরু রয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক খামারি খাদ্য সঙ্কটের কারণে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছেন বলে শুনেছি। প্রতি বছর বন্যার কারণে চলনবিল এলাকায় গোখাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। তবে গবাদিপশুকে কচুরিপানা বা অন্যান্য গাছপালার পাতা না খাওয়ানোই ভালো। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। গোচারণ ভূমি বন্যাকবলিত হওয়ায় খামারিদের ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র গুরুদাসপুরেই গরুর খামার রয়েছে ৭২টি। মোট গরুর সংখ্যা এক লাখ পাঁচ হাজার। মোট ছাগলের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে ৪৯টি ছাগলের সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার। মহিষের সংখ্যা রয়েছে ৪২০টি। ভেড়ার ১১টি খামারে মোট ৪২০টি ভেড়া রয়েছে।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ, বৈরী আবহাওয়া আর নগরায়নের ফলে গোচারণ ভূমি কমে আসছে। তবে খামারিরা ব্যক্তিপর্যায়ে উন্নতমানের ঘাস চাষ করে তাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন। তাছাড়াও নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার বিভিন্ন হাটে কাঁচা ঘাসের হাট বসে। সেখান থেকে খামারিরা ঘাস কিনে থাকে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ব্যবস্থা করেছি। এতে কৃষক এবং খামারিরা উভয়ই উপকৃত হচ্ছে।