স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌসুমি বায়ু। আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির খুব একটা সম্ভাবনা থাকবে না বলে কয়েকদিন পরই পুরো দেশ তাপ প্রবাহের আওতায় চলে যেতে পারে। তাপ প্রবাহ থাকতে পারে বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার এক দিন-দুই দিন আগ পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি আসার পরই গরম পরিবর্তিত হয়ে আবহাওয়া সহনীয় মাত্রায় চলে আসতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর থেকে চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বর্ষা মৌসুমের আনুষ্ঠানিক বিদায় নেয়া।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ হিমাওয়ারি থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশের আকাশ প্রায় পুরোপুরি মেঘমুক্ত থাকবে। আকাশে মেঘ না থাকায় সূর্যতাপ কোনো বাধা ছাড়াই ভূপৃষ্ঠে পতিত হবে। ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে তাপ প্রবাহ অথবা এর কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছতে পারে এবং এটা চলবে আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে- সেটা সংঘটিত হলে তাপ প্রবাহের অবসান হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল বলেন, এ সময়ের মধ্যে পুরো বাংলাদেশে বৃষ্টি না হলেও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকায় কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমী বায়ু চলে গেলেও মিয়ানমারের দিক থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ কিছু বায়ু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে আকাশে উঠে মেঘের সৃষ্টি করবে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে মৌসুমি বায়ু আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে আরো দক্ষিণে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ২৪ অক্টোবরের দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়টি সম্বন্ধে মোস্তফা কামাল বলেন, সর্বশেষ মডেল পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা রাজ্যের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে উপকূলে উঠে আসতে পারে। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো নির্দেশ করছে যে, আগামী মঙ্গলবারের দিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিছু কারণে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী না হয়ে সাধারণ মানের ঘূর্ণিঝড়ও হতে পারে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, এমনটাই নির্দেশ করছে পূর্বাভাস মডেলগুলো। তবে সাধারণ মানের হলেও আগামী ২৫ অক্টোবর এই অঞ্চলে অমাবশ্যার সৃষ্টি হবে জানিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, অমাবশ্যার কারণে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত করার সময় যত কম শক্তিশালী হোক, ‘তাতে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতির আশঙ্কা নাকচ করে দেয়া যাচ্ছে না। অমাবশ্যার টানে উপকূলীয় এলাকায় বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক হতে পারে।’
তিনি বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জ থেকে পশ্চিমদিকে ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মাঝামাঝি উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থল ভাগে আঘাত করতে পারে। পক্ষান্তরে যদি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে উত্তর দিকে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার দিকে অগ্রসর দিকে হলে সেটা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থল ভাগে আঘাত করতে পারে। এর সাথে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারের আকাশে থাকা জেটস্ট্রিমের একটি সম্পর্ক রয়েছে। অন্য দিকে ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি অনেকটাই নির্ভর করবে ভারত নাকি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে তার ওপর। পুরো বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের উপকূলে এবং সবচেয়ে কম ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলবর্তী সমুদ্রে। পানির তাপমাত্রার সাথে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়া ও কমার একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকবে সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়বে।