সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে সতর্ক সরকার

পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে সতর্ক সরকার

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারি পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন লেখার বিষয়বস্তু ও ছবি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সরকার। পাঠ্যসূচি নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়- এমন লেখা, ছবি বা কার্টুন পরিহার করে পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক উৎসব হয়। আর আড়াই মাস বাকি রয়েছে এই উৎসবের। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখের মধ্যেই নতুন বই পৌঁছাতে হয় জেলা-উপজেলায়। তবে লক্ষ্য অনুযায়ী ছাপানোর কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ছাপানোর শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে নতুন করে পাঠ্যবইয়ে পাণ্ডুলিপি সংযোজন-বিয়োজন করতে হচ্ছে। আছে লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী

ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এনসিটিবির কর্মকর্তাদের নিয়ে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেন। বৈঠকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় পাঠ্যবইয়ের নানা ত্রুটি তাদের চোখে ধরা পড়ে। এতে কোনো বইয়ে ছবি যথাযথ হয়নি, আবার কোনো বইয়ের বিষয়বস্তু ‘কম’ হয়েছে। কোথাও আবার ইতিহাসের বর্ণনা যথাযথ হয়নি। কোনো বইয়ে মাদ্রাসার উপযোগী কোনো ছবি সংযুক্ত হয়নি।
বৈঠকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রায় ২০টি বইয়ের কিছু কিছু অংশ আবার ঠিকঠাক করার নির্দেশনা দিয়েছেন দীপু মনি। বইগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল টেকনোলজি, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প সংস্কৃতি ও ধর্ম।

সভায় এনসিটিবির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি করে- এমন কিছু পাঠ্যবইয়ে রাখা যাবে না। সম্প্রীতির বার্তা দেয়, এমন হাদিসের বাণী সংযোজন করতে হবে। রক্ষা করতে হবে লিঙ্গসমতাও। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই রচনার কাজ শেষ হয়েছে। এখন কিছু অংশ ঠিকঠাক করা হচ্ছে। এর পরেই বইগুলোর ছাপা শুরু হবে।

এদিকে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এবারের মূল সংকট তিনটি- বিদ্যুৎ, কাগজ ও সময়। লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রেস মালিকরা। ডিজেলে প্রেস চালালে খরচ বেশি পড়ে।

এনসিটিবির বইয়ের জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন। কিন্তু কাগজ তৈরির মূল উপাদানের (পাল্প) সংকট রয়েছে। সরকার একসঙ্গে খুব বেশি পাল্প আমদানির অনুমতি দিতে চায় না। এ ছাড়া ডলারের মূল্য এবং পাল্পের মূল্য ওঠানামা করায় পেপার মিলগুলো একসঙ্গে অধিক পরিমাণ পাল্প আমদানিও করতে চাইছে না। আবার এত দেরিতে এসে সম্মতিপত্র (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) মিলেছে যে, যথাসময়ে বই ছাপা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘যথাসময়ে বই দেওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ কাগজের সংকট রয়েছে। পাল্পেরও সংকট রয়েছে।’

এনসিটিবির নিয়ম অনুযায়ী, টেন্ডারে অংশ নেওয়ার জন্য প্রেস মালিকের কাছে সম্মতিপত্র (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) চাওয়া হয়। সম্মতিপত্র চাওয়ার পর দরদাতারা অন্তত এক সপ্তাহ সময় পান। এরপর তারা আরও ২৮ দিন সময় পান চুক্তি করার জন্য। দরদাতারা পারফরম্যান্স গ্যারান্টি বা সিকিউরিটি মানি দিলেই এনসিটিবি বই ছাপার অনুমতি দিতে সম্মত হয়। এরপর বই মুদ্রণের কার্যাদেশের পাশাপাশি পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়। ওই পা-ুলিপি যাচাই ও এনসিটিবির অনুমোদন নিয়ে বই মুদ্রণ শুরু করতে আরও তিন-চার দিন সময় লেগে যায়। এখনো অনেক প্রেস মালিকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়নি।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। কাগজ কম-বেশি পাওয়া গেলেও আমরা লোডশেডিং নিয়ে চিন্তিত। আমাদের লক্ষ্য, ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপানো শেষ করা।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৩ কোটির বেশি বই ছাপানো হবে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে ৯ কোটি আর মাধ্যমিকে সাড়ে ২৩ কোটির বেশি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877