শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত সরকার

বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত সরকার

স্বদেশ ডেস্ক:

একদিকে সরকারের সঠিক প্রস্তুতি অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নানা দাবী অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম চলছে। প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার পর্বের মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ ধাপ অতিক্রম করছে ইউএনএইচ সিআর ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ব্যস্ততম সময় পার করছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (নং-২৬) ঘুরে এ চিত্র দেখা দেছে। প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা ৩ হাজার ৪৫০ জনের মধ্যে কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলতে গেলে নুর হাশেম (৩২) অনেক ভয়ে কথা বলা শুরু করে। পরে পার্শ্ববর্তী স্থানে ওঁৎপেতে থাকা রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী সংগঠনের নেতাদের তৎপরতায় ভয়ে পিতার নাম পর্যন্ত বলতে পারেনি। প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কিছু শর্ত রয়েছে যা মানলে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজী। অন্যথায় তারা ফিরবে না। এমনকি গুলি করে মেরে ফেললেও তারা শর্তপূরণ ছাড়া ফিরতে রাজী নয়। এনভিসি কার্ড নয় সরাসরি নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়ীতে ফেরত, কারাগারে বন্দী রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষনের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদানসহ বেশ কিছু শর্ত পূরণ না হলে স্বদেশ ফিরবে না রোহিঙ্গারা।

ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ ও ইউএনএইচসিআর’র লোকজন রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে ২২ আগস্ট স্বদেশে ফিরে যাওয়ার বার্তা। এসময় অনেক রোহিঙ্গা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। আবার অনেকে এসব শর্ত জুড়ে দেন। এসময় কথা হয় প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা শালবন ক্যাম্পের এ-ব্লকে বসবাসকারী মো. জুবাইরের সাথে। তিনি জানান, ইউএনএইচসিআর’র একটি প্রতিনিধি দল সকালে এসে পারিবারিক ডাটা কার্ড খোঁজে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। পরে জানতে পারি প্রত্যাবাসনের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। মিয়ানমারের বুচিডং চাংচিপ্রাং এলাকার জোবাইর স্বদেশ ফিরবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন, নিজের দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে আছি। নাগরিকত্ব, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, অবাধ চলাফেরা ও নিরাপত্তা দিলেই ফিরব। এভাবে গেলে মরণ নিশ্চিত। এরচেয়ে এদেশে মৃত্যুই ভাল হবে।

তালিকায় থাকা হাসিনা বেগম বলেন, স্বামী-সন্তানদের নিরাপত্তা কে দিবে। ওখানে গিয়ে আশ্রয় শিবিরে রাখবে। অবাধ চলাফেরা করা যাবে না। রোহিঙ্গা স্বীকৃতি দেবে না। তাহলে কি নিয়ে আমরা স্বদেশে ফিরব? একই ব্লকের জয়নব বেগম বলেন, মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগেও তারা অনেকবার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। তাই সরাসরি নাগরিকত্ব প্রদান করলেই আমরা ফিরতে পারি। শালবন ক্যাম্পের ডি ব্লকের রোহিঙ্গা মাঝি নুর মোহাম্মদ রোহিঙ্গাদের দাবীর সাথে একমত পোষণ করে বলেন, মিয়ানমারে ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে গোঠা মিয়ানমারে অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে।

এদিকে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা কিছু রোহিঙ্গা মঙ্গলবার ও বুধবার ২৬ নং ক্যাম্পের সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) অফিসের কাছে বিক্ষোভ করেছে। এসময় নিজেদের দাবী তুলে ধরে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন রোহিঙ্গারা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া মোস্তফা কামাল, শফিকা একই শর্ত জুড়ে দেন।  আবার সাধারণ রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ জানান, ক্যাম্পে তারা স্বাধীন মতামত দিতে পারছেন না। রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র গ্রুপ সবসময় তাদের উপর নজরদারী করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে এগিয়ে নিতে ইউএনএইচসিআর ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের কাছে লিফলেট বিতরণ করেছে। লিফলেটে স্বদেশ ফিরে গিয়ে কোথায়, কিভাবে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে ধারণা রয়েছে।

প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরনতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে দুটি ট্রানজিট ঘাট আগেই তৈরি করা ছিল। বাকী ছিল তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার পর্ব তথা মতামত নেয়া। মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এসময় জাতিসংঘ শরনার্থী হাই কমিশনের কর্মকর্তারা প্রথমে তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের মিয়ানমার সরকারের ফিরিয়ে নেয়ার বার্তা দিয়ে আসছে। পরে তাদের সংশ্লিষ্ট সিআইসি অফিসে নিয়ে এসে সাক্ষাতকার তথা মতামত নিচ্ছে। এসময় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকছেন। কিন্তু সাক্ষাতকার পর্ব থেকে বের হয়েই রোহিঙ্গারা জটলা তৈরী করে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নানা দাবী জুড়ে দিচ্ছে। তাদের দাবী পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে জানাচ্ছেন তারা।

তবে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আশাবাদী শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আর আর আর সি।  কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা আশাবাদী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন হবে। পাশাপাশি সকাল থেকে ইউএনএইচসিআর’র লোকজন তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিচ্ছে এবং এসব লোকজনকে সংশ্লিষ্টরা নানানভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছে।

গতবছরের ১৫ নভেম্বর প্রথমদফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ধার্য্য দিন রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে প্রত্যাবাসন করা যায়নি। তবে এবার রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার পর্বে অংশ নেয়াই বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা এখন আগের চেয়ে অনেক ইতিবাচক। এমন মন্তব্য শরণার্থী কমিশনারের।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877