বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

গর্ভবতী ডায়াবেটিক মা যেভাবে চোখের যত্ন নেবেন

গর্ভবতী ডায়াবেটিক মা যেভাবে চোখের যত্ন নেবেন

স্বদেশ ডেস্ক:

গর্ভধারণের পর মায়ের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হয়। অবশ্য যতœ নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চেকআপ, নিয়ম-মাফিক কিছু রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ভিটামিন এবং ভালো ভালো খাওয়ার উপদেশ পর্যন্তই আমরা বুঝে থাকি। তবে মা যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে পরিপর্যা এখানেই শেষ নয়। যেসব মায়ের ডায়াবেটিস আছে, তাদের মনে রাখতে হবে, গর্ভকালীন তাদের চোখের দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্যতম। আগে থেকেই এ সমস্যা বিদ্যমান থাকতে পারে, যা মায়ের কাছে অজানা থাকতে পারে।

ঝুঁকিতে যারা : যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে নেই, একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে বেশি কোলেস্টেরল আছে, মদ্যপান ও ধূমপানে আসক্তÑ তাদের জন্য রোগটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

উপসর্গ : ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ থাকে না। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকায় ৪০-৪৫ শতাংশ সদ্য শনাক্ত ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে কমবেশি রেটিনোপ্যাথি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অর্ধেকেই জানেন না, তার চোখে সমস্যা রয়েছে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কী : এটি চোখের এমন এক অবস্থা, যেখানে ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রক্তনালিতে একধরনের পরিবর্তন আসে। এ কারণে ওই রক্তনালি থেকে রক্তের জলীয় অংশ নিঃসৃত হয় বা রক্তক্ষরণ হয়। ফলে দৃষ্টি সমস্যা, এমনকি অন্ধত্ব দেখা দিয়ে থাকে।

চোখ পরীক্ষা যে কারণে প্রয়োজন : ডায়াবেটিস হলো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। এ অন্ধত্ব প্রতিরোধে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করাা জরুরি। গর্ভাবস্থায় যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস ও রেটিনোপ্যাথি আছে, তাদের চোখের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। যাদের আগে থেকে রেটিনোপ্যাথি নেই, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি নতুন করে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তের সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত বা বেশি।

যখন চোখ পরীক্ষা করাবেন : গর্ভাবস্থার আগেই একবার চোখ পরীক্ষা করানো ভালো। যদি রেটিনোপ্যাথি থাকে, তাহলে মাত্রা বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যদি রেটিনোপ্যাথি না থাকে, তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

যদি গর্ভকালীন পরীক্ষায় রেটিনোপ্যাথি ধরা পড়ে, তাহলে ২-৩ মাস অন্তর নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি এর মধ্যে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, হঠাৎ কম দেখা, একটা জিনিস দুটি দেখা, চোখের সামনে কালো স্পট দেখা ইত্যাদি উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। চোখ পরীক্ষার সময় অবশ্যই চোখের দৃষ্টি, চোখের প্রেসার, রেটিনা পরীক্ষা বা অফথেলমোস্কোপি, প্রয়োজন হলে ওসিটি করে দেখতে হবে।

রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধে করণীয় : ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হালকা কাজের মধ্যে থাকতে হবে। অনেকে মনে করেন, গর্ভাবস্থায় চোখের চিকিৎসা করানো ঠিক নয় অথবা ডেলিভারির পর চোখের চিকিৎসা নেওয়া ভালো। এটি ভুল ধারণা। কারণ চোখের পরীক্ষায় যেসব ড্রপ ব্যবহার করা হয়, তা গর্ভবতীর জন্য নিরাপদ। চিাকৎসায় লেসার প্রয়োগও মা ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877