শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

মারমুখী হয়ে উঠছে রাজনীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন মারমুখী হয়ে উঠেছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরে পাল্টাপাল্টি রাজপথ দখলের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। সেই হুমকি-ধমকি অনেকটা এখন রাজপথে গড়িয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে কিছুদিন ধরে বিএনপি রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। ক্ষমতাসীনরাও শক্তি প্রদর্শন করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। অবশ্য বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে শাসক দল। ফলে মুখোমুখি রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বাধছে সঙ্ঘাত, রক্তাক্ত হচ্ছে রাজপথ। ইতোমধ্যে দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি মাঠে নেমে ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, যশোর ও নারায়ণগঞ্জে তাদের পাঁচজন নেতাকর্মী হারিয়েছে। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয় নেতারাও আহত হয়েছেন।

এ দিকে জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি রাজনীতির মাঠ দখলের দেশের রাজনীতিতে সঙ্কটময় পরিস্থিতি আরো ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের বিবদমান বড় দু’দলের মধ্যে সংলাপ, সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত সেই সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।

তাদের মতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবিটি দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে গত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রথমটি অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেনি। আবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেও শেষমেশ নির্বাচনের দিন বর্জন করে। ওই দাবিকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে অন্যান্য ছোট বড় প্রায় সব রাজনৈতিক দল প্রতিদিনই রাজপথে মিছিল সমাবেশ করছে।

সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলা সমাবেশে হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এরপরই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে মাঠ দখলের হুমকি দিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আবার রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার পাল্টা হুমকি দিয়ে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে শক্তি দেখিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি হুমকির মধ্যে ঢাকার বনানী, পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে তাদের দুইজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ফলে কিছুদিন আগের উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থা এখন সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, যেসব ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নামছে তা যৌক্তিক। রাজনীতিতে সহিংস পরিস্থিতি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল না হলে দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ড. মজুমদার বলেন, এসব অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা থেকেই যাবে। আলাপ-আলোচনা বা সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই।

বিশিষ্ট সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। আন্তর্জাতিক মহলেও ওই দু’টি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে দেশে স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। বিএনপি তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে সভা সমাবেশ করছে, সেখানে শাসকদলের নেতাকর্মীরা প্রতিহত করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিপেটা করছে, গুলি করছে। কোথাও কোথাও হামলার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। রাজনীতিতে এটা অশনিসঙ্কেত। এক প্রশ্নের জবাবে ইকতেদার আহমেদ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে তেমন কোনো নজির নাই। ফলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা বা বোঝাপড়া থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশ সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিএনপি যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এখন বিরোধী দলের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণও যোগ দিয়েছে। ফলে সরকার বুঝতে পেরেছে তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আন্দোলন দমন করার জন্য। পুলিশ বাহিনীকে তাদের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। এটাতো কাম্য নয়। তিনি বলেন, সরকার বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিলে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন হওয়া সম্ভব। অন্যথায় দেশের সঙ্কট যে মাত্রায় পৌঁছেছে তাতে অনিবার্য পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি নয়া দিগন্তকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ এভাবে চলে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার যে কারণ তার সমাধান সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকে এসব সমস্যার সমাধান করছে না, ফলে সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, নানা ধরনের সঙ্কট সরকারকে এখন অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ জনগণ এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই যোগ দিচ্ছে। এসব কারণে সরকারের নৈতিক মনোবলও ভেঙে গেছে। সাধারণ জনগণ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে যুক্ত হওয়ায় সরকার ইচ্ছে করলেই আর আগের মতো আন্দোলন দমন করতে পারবে না। দেশের অলিতে গলিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সামনের পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877