শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

‘জনম বাকিতে’ তলিয়ে গেছেন ১৫০ আড়তদার

‘জনম বাকিতে’ তলিয়ে গেছেন ১৫০ আড়তদার

স্বদেশ ডেস্ক:

গেল কোরবানির ঈদে চামড়ার অকল্পনীয় দরপতনের পর এ নিয়ে যখন দেশজুড়ে চলছিল আলোচনার ঝড়, তখন সে ঝড়ে ঘূর্ণিবার্তা ছাড়েন আড়তদাররা। তারা জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদাররা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাবেন। এ বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় আড়তদারদের আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে।

এ কারণেই তারা এবার প্রত্যাশিত দামে চামড়া কিনতে পারেননি এবং এ খাতে এমন উদ্বেগজনক মন্দা নেমে এসেছে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করলে চামড়াশিল্পের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলেও জানান তারা। শুধু তাই নয়, বকেয়া পরিশোধ না করলে ট্যানারি মালিকদের কাছে কোনো চামড়া বিক্রি করা হবে না বলেও ঘোষণা আসে আড়তদারদের কেন্দ্রীয় সংগঠন থেকে।

এখনো সেই ঘোষণাতেই অটল আছেন আড়তদাররা। তারা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা পরবর্তী সময়ে অর্থ পরিশোধ করবেন বলে বাকিতে চামড়া ক্রয় করলেও সে অর্থ পরবর্তী সময়ে আর পরিশোধ করেন না। অথচ তারা ঠিকই ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা পান। আড়তদাররা ব্যবসায় যে পুঁজি খাটান, বাকির অজুহাতে সেটি চলে যায় ট্যানারি মালিকদের পকেটে। এ টাকা কখনো ফেরত আসে না। ট্যানারি মালিকদের এমন ‘জনম বাকি’র খপ্পরে পড়ে এ পর্যন্ত অন্তত দেড়শ আড়তদার নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে জানান তারা।

এদিকে ট্যানারি মালিকরা বলেছিলেন, তারা ১৭ আগস্ট থেকে আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন। কিন্তু গতকাল ট্যানারি মালিকদের কাছে কোনো চামড়া বিক্রি করেননি বকেয়া পাওনা আদায়ের দাবিতে একাট্টা আড়তদাররা। যদিও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, আড়তদারদের দাবিকৃত বকেয়া অর্থের পরিমাণ সঠিক নয়। তারা নিয়মিতই আড়তদারদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করে আসছেন। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য; দুপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্বের অবসান এবং আড়তদারদের দাবিকৃত বকেয়ার বিষয়ে

করণীয় নির্ধারণে আজ রবিবার দুপক্ষকে বৈঠকে ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, এ বৈঠকে সমস্যার সুরাহা হবে। অন্যথা চামড়াশিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা।

চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কোরবানির ঈদে চামড়ার দামে মারাত্মক ধস নেমে আসায় ঈদের পর দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রথমবারের মতো কাঁচাচামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এ ঘোষণায় শঙ্কিত হয়ে পড়েন ট্যানারি মালিকরা। তারা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তোলেন সরকারের কাছে। তাদের যুক্তি, এতে করে দেশের সম্ভাবনাময় চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে ভীষণ মার খাবে; পুরো খাতের ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়বে। তবে এর পরও সরকার রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে এ পর্যন্ত সরে আসেনি।

আড়তদাররা জানান, মাত্র ৫ শতাংশ ট্যানারি মালিক ঠিকঠাক লেনদেন করেন। অন্য সবাই বাকিতে চামড়া কেনেন এবং পরে এ অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করেন। পারতপক্ষে অর্থ পরিশোধ করেন না। সরকার রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ায় এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে করেন তারা। বলেন, তা হলে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জিম্মি হবেন না এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হওয়ায় ন্যায্যত কেউ ব্যবসায়ে মার খাবেন না।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজি দেলোয়ার হোসেন গতকাল আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ট্যানারির মালিকরা গত পাঁচ বছরে অন্তত ১৫০ আড়তদারকে নিঃস্ব করে ছেড়েছেন। বাকিতে চামড়া নিয়ে পরিশোধ করেননি।

আড়তদার হাজি আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ট্যানারির মালিকরা আমাদের কাছ থেকে বাকিতে চামড়া নিয়ে সেই টাকা দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করেন অথচ আমাদের পাওনা পরিশোধ করেন না। বাস্তবতা দেখুনÑ একেকজন ট্যানারি মালিক নতুন নতুন গাড়ি হাঁকান আর আড়তদাররা পুঁজির জন্য ভিটেবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন এমন রেকর্ড কম নয়।

চামড়া কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বাইরে থেকে চামড়া কিনতে শুরু করেছি। পোস্তার আড়তদারদের কাছ থেকে এখনো কিনতে পারিনি। তারা বিক্রি করতে চাইছেন না। তবে আশা করা যায়, দু’এক দিনের মধ্যে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।

এদিকে আড়তদারদের পাওনা টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ আমাদের সময়কে জানান, আড়তদাররা ট্যানারিগুলোর কাছে যে টাকা পাবেন সেগুলো অনেক বছর ধরে চলা ব্যবসার কারণে। দুপক্ষের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা ব্যবসায় কিছু টাকা বাকি থাকতেই পারে। এটি অস্বাভাবিক নয়।

আড়তদারদের ৪০০ কোটি টাকা পাওনাÑ এটি ভিত্তিহীন বলে মনে করেন শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, তারা যে টাকা পাবেন, তা পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।

শাহীন আহমেদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হাজি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসব মিথ্যা কথা। আড়তদারদের এতদিন একতরফাভাবে ঠেকিয়ে তারা যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করেছেন। তারা ভাবতেন, তাদের ছাড়া আমাদের চামড়া বিক্রির আর কোনো উপায় নেই। তাই ইচ্ছেমতো আমাদের নাচিয়েছেন। এখন সরকার রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ায় ট্যানারি মালিকরা পাগল হয়ে গেছেন।

পোস্তার আড়তদার অপু মিয়া জানান, ট্যানারির মালিকদের কাছে আমাদের কোটি কোটি টাকা বাকি পড়ে আছে। অথচ সামান্য লবণের টাকা না থাকায় আমার ৮০০ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877