শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গুজবে গণপিটুনি বন্ধ হচ্ছে না

গুজবে গণপিটুনি বন্ধ হচ্ছে না

স্বদেশ ডেস্ক:

কোনো গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে গত শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। তার পরও প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনিতে নির্যাতন ও খুনের ঘটনা ঘটছে। গতকাল সোমবারও দেশের কয়েকটি জেলায় অন্তত ১৮ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন, এনজিওকর্মী, অজ্ঞান পার্টির সদস্য ও শিশুও রয়েছে।

এদিকে ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণপিটুনিতে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে গতকাল হেডকোয়ার্টার্স থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারসহ পুলিশের সব ইউনিটে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। গুজব বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। এ ছাড়া ছেলেধরা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিলে বা শেয়ার করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক পোস্টে মন্তব্য বা গুজব ছড়ানোর পোস্টে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতেও বলেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।

পাশাপাশি নাগরিকদের সতর্কবার্তা দিয়ে সরকার জানিয়েছে, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো ও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া আইনের পরিপন্থী ও গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই কোনো বিষয়ে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে নিজের হাতে আইন তুলে না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ৯৯৯ নম্বরে কল করে দ্রুত পুলিশের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলেধরা গুজবকে ভিত্তি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্যাতন ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। গুজব ছড়িয়ে এমন অপকর্মের নেপথ্যে একটি চক্র কাজ করতে পারে। তাদের বড় একটি ষড়যন্ত্রের অংশ এ ছেলেধরা গুজব। তারা গুজব রটিয়ে বিশেষ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে খারাপ করার জন্য এ অপচেষ্টা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মাহবুব আলম বলেন, ‘কুচক্রী মহলকে রুখে দিতে আমরা সজাগ রয়েছি। গুজব রটনা ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে।’ আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সাভার : ছেলেধরা সন্দেহে এক দম্পতিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। খবর পেয়ে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ। আটক রনি মিয়া (২৩) ও বিলকিস খাতুনের (২০) বাড়ি রাজবাড়ীর গোদাগাড়ী থানার সাহেববাজার গ্রামে। এলাকাবাসী জানান, সাভারের রাজবাড়ী এলাকায় ভাড়াবাড়িতে গতকাল দুপুরে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রুমি খাতুন (১৭) নামে এক তরুণীকে মুখ চেপে ধরে অজ্ঞান করার চেষ্টা করেন আটক স্বামী-স্ত্রী। পরে ওই তরুণী চিৎকার দিলে এলাকাবাসী ছেলেধরা সন্দেহে একজোট হয়ে তাদের পিটায়। এদিকে ছেলেধরা সন্দেহে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ১২ বছরের এক শিশুকেও গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আটক স্বামী-স্ত্রী ছেলেধরা নয়, তারা মূলত অজ্ঞান পার্টির সদস্য। বিভিন্ন বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়াদের অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা-পয়সা লুটে নেওয়াই তাদের মূল কাজ। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

ঢাকা : রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অল্পের জন্য গণপিটুনি থেকে বেঁচে গেলেন ইমরান (২৮) নামে এক যুবক। গতকাল সকালে ছেলেধরা সন্দেহে তাকে আটকে রাখেন স্থানীয়রা। তিনি সকাল ৮টার দিকে পণ্ডিতপাড়ায় এক শিশুকে কোলে নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলেন। এ থেকে সন্দেহ হয়, ওই যুবক ছেলেধরা। স্থানীয় কয়েকজন তাকে একটি দোকানে বসিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে রটে যায়, পণ্ডিততপাড়ায় এক ছেলেধরাকে আটকে রাখা হয়েছে। মুহূর্তে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। তারা দাবি তোলেন, ওই যুবককে গণপিটুনি দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল গণি সাবু বলেন, ‘ছেলেধরা সন্দেহে যে যুবককে আটক করা হয়েছিল, তাকে আমরা উদ্ধার করেছি। ইমরান নামে ওই যুবক বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, তিনি এক আত্মীয়ের শিশুকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন।’

রাজশাহী : ‘ছেলেধরা’ গুজবে রাজশাহীতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন পাঁচ এনজিওকর্মী। গতকাল দুপুরে উপজেলার রাওথা এলাকা থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়েছে। আটকরা হলেন-গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার হাফিজুর রহমান (৪২), একই এলাকার আবুল হোসেন (৪০), রেজাউল করিম (৩৮), ঢাকার লালবাগ থানার কাইয়ুম আলী (৩৯) ও একই এলাকার আবুল কালাম (৩৬)। তারা নিজেদের আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামে একটি এনজিওর কর্মী দাবি করেছেন।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) : এক সপ্তাহে সৈয়দপুরে আটজন নিরীহ মানুষ ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে দুলাল হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। তার বাড়ি নীলফামারী সদরের আরাজি ডাঙ্গাপাড়ায়। তিনি শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে গণপিটুনির শিকার হন। পরে খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানার এসআই দীলিপ কুমার রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করেন।

এর আগে রবিবার কামারপুকুর আদানীর মোড়ে মজিদ (৪৫), খিয়ারজুম্মায় জব্বার (৪৮) ও কাজীপাড়া এলাকায় মোছা. মরিয়ম বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেন উত্তেজিত জনতা। সৈয়দপুর থানার ওসি মো. শাহজাহান পাশা বলেন, ‘বর্তমানে ছেলেধরা গুজব দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখানেও আট নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।’

মাদারীপুর : সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজার এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গলা কাটা (ছেলেধরা) সন্দেহে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করেছে। ওই নারী মূলত মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

চট্টগ্রাম : বাঁশখালীতে ছাগল কিনতে যাওয়া তিন যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় একদল যুবক। গতকাল দুপুরে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে তারা আক্রান্ত হন। আহতরা হলেন-মুহাম্মদ জনি (৩১), সোহেল হোসেন (৩০) ও মো. হৃদয় (৩৫)। তাদের মধ্যে জনি ও সোহেলের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে। হৃদয়ের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছেলেধরা সন্দেহে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে তিন যুবককে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-মোখলেছ মিয়া (৩২), গিয়াসউদ্দিন (৩২) ও সিরাজুল ইসলাম (৩০)। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, অলিপুর এলাকায় তিন যুবক সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের ছেলেধরা সন্দেহে ধাওয়া করে গণপিটুনি দেয়।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : ছেলেধরা সন্দেহে দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিসুর রহমান জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রহিমপুর ইউনিয়নের দেওরাছড়া চা বাগান এলাকায় এক অপরিচিত যুবককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে দেয়। আটক সানাউল্যাহ (২৫) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার বাসিন্দা। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ছাড়াও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের উবাহাটা গ্রাম এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে শহীদুর রহমান (৩২) নামে এক যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী।

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) : ধর্মপাশায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আলী আমজাদ আল আজাদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আজাদ উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘুলুয়া গ্রামের বাসিন্দা। ধর্মপাশা থানার এসআই আজিজুর রহমান জানান, আজাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলেধরা ও গলা কাটা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছিল।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) : ছেলেধরা সন্দেহে পীরগঞ্জে একটি কোম্পানির টেকনেশিয়ানকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে জনতা। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে উপজেলার লোহাগাড়া কলেজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : কল্লাকাটা সন্দেহে রুবেল মিয়া (৩২) নামে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। গতকাল দুপুরে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের কান্দারপাড়া বাজার জামে মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটক যুবক টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877