স্বদেশ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুডস’র সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে আগুনে হতাহতের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ না করায় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, কারখানার পরিবেশ ও মান উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রেখে আদালত বলেছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাদের খুব পজিটিভ কোনো ভূমিকা দেখি না। তারা শুধু আছে কীভাবে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নেবে, আর ব্যাংকঋণের টাকা মাফ পাওয়া যাবে। তাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি বা ফ্যাক্টরিগুলো যথাযথভাবে চলছে কি না, কোথায় কী দুর্বলতা ও ঘাটতি, তা দেখা উচিত।
অগ্নিকাণ্ডে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা, ওভার টাইম ও ঈদ বোনাস পরিশোধ নিয়ে করা এক আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এসব কথা বলেন।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ কোটি এবং আহতদের ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে গত শনিবার রিট করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি।
আদালত রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাও অপেক্ষা করেন। কোথায় কী হচ্ছে সজাগ থাকেন। ঈদের ছুটির পর নিয়মিত আদালত খুললে ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে যথাযথ আবেদন নিয়ে আসতে পারেন। যেকোনো বিষয়ে জরুরি মনে করলে আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন। এরপর সম্পূরক ওই আবেদনটি করা হয়, যা আজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী সারা হোসেন, নীনা গোস্বামী ও অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।
আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন সংগঠন এসব (রিট বা আবেদন) নিয়ে আসেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে যে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের এসব বিষয়ে কোনো ওভারসি নেই। এফবিসিসিআই স্টেটমেন্ট দিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর ব্যাপারে শোক জানিয়েছে বা তাদের কোনো প্রতিনিধিদল সেখানে গেছে, এর মধ্যে দেখিনি। এসব ক্ষেত্রে এফবিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি বা ফ্যাক্টরিগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, কোথায় কী দুর্বলতা, কোথায় ঘাটতি, তা দেখা উচিত।’
শিল্প কারখানা তদারককারী সরকারি সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, সেটা দেখা উচিৎ। আজকে পত্রিকায় দেখলাম পরিদর্শনে যান, গিয়ে খাম নিয়ে চলে আসেন। এসব জায়গাগুলোতে আপনাদের (মানবাধিকার, পরিবেশবাদী বা আইনি সহায়তাকারী সংগঠন) কাজ করার সুযোগ আছে।’
হতাহত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, বকেয়ার বিষয়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘বেতন-বোনাস দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে দেখলাম শুক্রবার তাদের বোনাস দিয়ে দেবে। আহত শ্রমিকদের কিভাবে দেওয়া হবে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের একটা বক্তব্য আছে দেখলাম। পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে। তারিখ উল্লেখ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোনো আদেশ দিলাম না। দেখা যাক।’