রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

অশ্বথমা হত, ইতি গজ

অশ্বথমা হত, ইতি গজ

অনুচয়নে: কাজী কাসেম:

প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতের মূল উপজীব্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। হস্তিনাপুরের সিংহাসন দখল নিয়ে যে টানাপোড়েনে কৌরব এবং পাণ্ডবদের মধ্যে শুরু হয় আঠারো দিনব্যাপী প্রলয়ঙ্কর সংঘর্ষ। কৌরবপক্ষের বীর দুর্যোধন ভ্রাতৃবর্গ, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, শল্য, অশ্বত্থামা এবং শকুনি। পাণ্ডবপক্ষে ৭ অক্ষৌহিনী সেনা। বিপরীতে কৌরবপক্ষে ১১ অক্ষৌহিনী। বলা বাহুল্য, ১ অক্ষৌহিনী বলতে বোঝায় ২১,৮৭০টি হাতি, ২১,৮৭০টি রথ, ৬৫,৬১০টি ঘোড়া এবং ১,০৯,৩৫০ জন পদাতিকের ‍সমাবেশ। উভয় পক্ষ সমানে সমান। কৌরব পক্ষের বীর সেনাপতি অশ্বথামা প্রবল আক্রমণে পাণ্ডব পক্ষ পাণ্ডব পক্ষ কোণ ঠাসা। পাণ্ডব হস্তি যুথের নেতা হাতিটির নাম ছিল অশ্বথামা। শ্ত্রু পক্ষের নিক্ষিপ্ত শরে এই গজরাজটি হত হয়। পরাজয় ঠেকানোর জন্য পাণ্ডবদের মামা শকুনি এক কূটকৌশলের আশ্রয় নিল। নবাব সিরাজ দৌওলা ও ইংরাজ বনিকদের মধ্যে পলাশী প্রান্তরে অসম যুদ্ধে ইংরাজ বাহিনী আসন্ন নিশ্চিত পরাজয় এড়ানোর জন্য ইংরাজদের সংগে গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ নবাব সিরাজ সিরাজ দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলি খান নবাবকে ভুল বুঝায়ে নবাবের অনুমতি নিয়ে সমাগত সন্ধ্যায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এই মর্মে ঘোষণা জারি করলেন-‘ নবাবের সৈন্যগন কর অস্ত্র সম্বরণ-নবাবের অনুমতি কালি হবে রণ’। নবাবের সেনা বাহিনীগুলি যুদ্ধ বন্ধ করে ব্যারাকে গিয়ে নিরস্ত্র হয়ে বিশ্রামে গেল। কূট কৌশলের ওস্তাদ ইংরেজ বনিক সেনাপতি ক্লাইভ রাতের আধারে ঘুমন্ত নবাব সৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ করে বিনা যুদ্ধে নবাবকে পরা জিত করে এদেশের মানুষকে গোলাম বানায়ে ফেল্ল। অনুরূপ কূট কৌশলে পাণ্ডবদের মামা শকুনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে স্বরবে ঘোষণা করল–অশ্বথমা হত, ইতি গজ(অশ্বথমা নামক হাতিটি মারা গেছে)। কূট কৌশলের অংশ হিসাবে ঐ ঘোষণার শেষাংশ ‘ইতি গজ’ টুকু অস্ফুট সুরে বলায় কৌরব পক্ষের যোদ্ধারা ভুল বুঝে মনে করল তাদের প্রধান সেনাপতি নিহত হয়েছে। ফলে হতদ্দম হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালাতে শুরু করলে পাণণ্ড পক্ষ চাতুরির মাধ্যমে জয়লাভ করে।

বহুল আলোচিত বরগুনা জেলা শহরের কলেজ চত্তরে প্রকাশ্য দিবালোকে টগবগে যুবক রিফাত হত্যার মূল অসূর নায়ক বন্ড পুলিশের কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত (না, হত্যা ?) হলে ‘অশ্বথমা হত,ইতি গজ’ এর মত ঘোষনা করা হল-রিফাত হত্যার মূল নায়ক-ইতি নয়ন বন্ড বন্দুক যুদ্ধে হত। নয়ন বণ্ড তো ড্যাং ড্যাং করে স্বর্গে (?)বা নরকে চলে গেল। এখন ওয়ান মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন-শকুনি মামাটা কে? পুলিশ-জেলা পরিষদের সিংহাসনে আসীন খালু সাহেব-স্থানীয় সংসদ পুত্র-দলীয় সুবিধা ধারী অন্যান্য নেতারা ? এ চার গোত্রের যেই হ’ক-রসুনের সব কোয়াই কিন্তু গোড়াতে এক যায়গায়। সুচতুর নব্য বণ্ড সাহেব মামা, খালু ইত্যাদি সব কুলেই তার তরি তাদের ডাক মত ভিড়াতে কোন দ্বিধা করেনি। কাজেই বন্ড সাহেবের উর্দ্ধ লোকে যাত্রায় এই পিতৃ মাতৃ কুলের সবারই গায়ের জ্বর ঘাম দিয়ে ছেড়েছে।

দেশের আওয়ামী ঘরানার নেতা তৈরির আতুড় ঘর নামে খ্যাত স্বনাম ধন্য জাতীয় ছাত্র লীগের নেতারা প্রায়ই উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করে থাকে-ছাত্রলীগের কোন সদস্যই চাঁদাবাজির সংগে জড়িত নয়। দাবিটা যদি বাস্তবভিত্তিক হ’ত তবে কতই না সুখকর হ’ত। বাস্তবে পথে ঘাটে মাঠে আমরা কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে চাঁদাবাজির ঠেলায় উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের ছেড়ে দে’ মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। কয়েক দিন আগে কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের কয়েক জন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সংগে দেখা করে অভিযোগ করে-নতুন শিক্ষক নিয়োগে কয়েকজন শিক্ষক চাঁদাবাজি করেছে। নেতারা কিন্তু এ পর্যন্ত বলে থেমে থাকলে বিষয়টা হয়ত তেমন নিন্দনীয় হতো না। কিন্তু আদু ভাইয়েরা সংগে সংগে যোগ করেছে-নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা চাঁদাবাজি করতে পারি কিন্তু শিক্ষকেরা কেন চাঁদাবাজি করবে? উপাচার্য মহোদয় ছাত্র নামধারী আদু ভাইদের এহেন ‘ছোট মুখে বড় কথা শুনে নিশ্চয়ই মনে মনে বলেছে– ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু, অনলে পুড়িয়া গেল। আমাদের এই দেশেই স্বনামে খ্যাত এক উপাচার্য মহোদয় এক ছাত্রের বেআদবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিংহ গর্জনে হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন-দেখ এই দেশে তিন জন অধম আছে-এক জন ডাক্তার কুদরতে খুদা, আর এক জন ডাক্তার শহিদুল্লাহ-আর এক অধম এই অধম-বিধির কলম নড়লেও নড়তে পারে কিন্ত এই অধমের কলম নড়াতে পারবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তর গুলো থেকে ছাত্র নামধারি দলীয় আদু ভাইদের ঝেটিয়ে তাড়ায়ে দেওয়ার মত সাহসী নির্দলীয় পণ্ডিত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ঐ পবিত্র আসনে আসীন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশ ও জাতির জন প্রয়োজনীয় সংখ্যাক পণ্ডিত তৈরি হবে না। এখনো অবশ্য অনেক পণ্ডিত তৈরী হচ্ছে তবে তারা পাণ্ড ধাতু ইত পূর্বক পণ্ডিত নয় (পান্ড মানে জ্ঞান, ইত পূর্বক অর্থ করায়ত্ম করা), এঁদের বেশীর ভাগই পণ্ড ধাতু ইত পূর্বক অর্থে পণ্ডিত(দেশের প্রকৃত পণ্ডিত ব্যাক্তিদের কাছে আমি এই গণ্ড মূর্খ ক্ষমা চাচ্ছি)। এঁদেরকেই ডাক্তার শহীদুল্লাহ সাহেব পণ্ডিত মূর্খ বলেছেন।আর আমরা দেশের আমজনতা-গণ্ড মূর্খের দলে। 

নারী শিক্ষার আদি আলোক বর্তিকা বেগম রোকেয়ার স্মৃতি বিজড়িত রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে প্রথম মেধার প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে দ্বিতীয় তৃতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দিলে বঞ্চিত প্রথম মেধাধারী প্রার্থী দীর্ঘ দিন যাবত উচ্চ আদালতে আইনী লড়াই করে নিয়োগ পাওয়ার আদেশ পেয়েছেন। যদি লজ্জা শরমের বালাই থাকত তবে উপাচার্য মহোদয়ের নাকে খত দিয়ে ইস্তফা দেওয়া উচিৎ ছিল। এটা অবশ্যই আমরা আশা করতে পারিনা। আমাদের তো দুই কান-ই কাটা। ঐ যে কথায় আছে ‘এক কাটা ব্যক্তি লোক লজ্জায় শহরের বাহির দিয়ে যাতায়াত করে, আর দুই কান কাটা ব্যাক্তি শহরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877