স্বদেশ ডেস্ক: ৬০ বছরের বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি নরসিংদীর উত্তর ভাঘাডার সাহেপ্রতাভ এলাকায়। গত শুক্রবার এই ব্যবসায়ী সিলেট শহরতলির শাহপরান এলাকার পিরেরবাজারে মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন আদরের মেয়েকে দেখতে। গেল ঈদে মেয়ের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় তিনিই সিলেটে আসেন।
দুদিন মেয়ের বাড়িতে থেকে গত রবিবার রাত ১০টার উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ট্রেনটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় যাওয়ার পরই পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। হঠাৎ অনুভব করেন- ট্রেনের বগির নিচে আটকে আছে তার ডান হাত। একজন নারী তার বাম হাত ধরে টেনে আটকেপড়া হাত বের করার চেষ্টা করছেন। ওই নারীকে সহযোগিতা করছেন এক পুরুষ।
এ সময় বিধান চন্দ্র ওই নারী আর পুরুষকে বলেন, আপনারা আমার হাত টানবেন না, আমার হাতটি বগির নিচে। হাতটা মনে হচ্ছে পুরোপুরিই ভেঙে গেছে। কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা বগির নিচ থেকে বিধান চ-ের হাত বের করে তাকে পাঠান মৌলভীবাজর সদর হাসপাতালে। হাতের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে পাঠানো হয় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় আমাদের সময়কে এমনটিই জানান ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত বিধান চ-।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা হাতটি ভালো করার চেষ্টা করছেন। ভগবান জানেন হাত রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা। তিনি বলেন, হাত কেটে ফেলতে হলে কী আর করা, ভগবানের কৃপায় প্রাণে তো বেঁচেছি। বিধান চ-ের সঙ্গে ওসমানী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্কুলশিক্ষক সেলিম রেজা। অর্তনাদ করছেন তিনি। ব্যান্ডিজ করা হাতে রক্ত ঝরছে। তিনি বড়লেখার চন্দ্রগ্রাম হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। মা ও ভাগ্নেকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। ট্রেনে বসে থাকা সেলিম রেজা কিছু বোঝার আগেই তাদের বগি ছিটকে পড়ে। মা ও ভাগ্নের কিছু না হলেও সেলিমের হাতের অবস্থা গুরুতর। তিনিও হাত রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় আছেন। শুধু বিধান চ- আর সেলিম রেজা নন; সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ২১ পুরুষ ও তিন নারী আর্তনাদ করছেন।
ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য আহতরা হলেন- আতিক, খয়রুল হক, নিলুৎপল, সুজন চন্দ্র দেব, রেজাউল করিম, দয়াল দাশ, মইনউল ইসলাম, ফিরোজ আহমদ, সুজন, জাহাঙ্গীর, মুশাহিদ, মোস্তফা, ইমরান আহমদ, মকবুল হোসেন, ইলিয়াস, জামিল, মো. শরিফ, জাহিদুল, হুমায়ুন কবির, আবদুল মান্নান, অদিতি সরকার, খাদিজা, রুকেয়া।
ট্রেনযাত্রী গোলাপগঞ্জের খাইরুল ইসলাম সুমন বলেন, আমরা অফিসের কাজে সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় আমাদের বগির মধ্যে একজন নারীর মৃত্যু হয়। ওই নারীর মাথা এমনভাবে আটকে গিয়েছিল তাকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিল না। এ ছাড়া অনেকেই হাত-পাসহ বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় রবিবার রাতে ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। এরই মধ্যে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।