স্বদেশ ডেস্ক: ২০১৯-২০ সালের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের মুনাফা ৩০ জুনের না উত্তোলন করলে বাড়তি কর কেটে নেওয়া হবে। এ জন্য মুনাফা উত্তোলনের জন্য হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে প্রতিদিনই ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। গ্রাহকদের চাপ সামলাতে গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করছেন কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার এক নারী এসেছিলেন মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে। গত তিন মাসের মুনাফা উঠাননি তিনি। কর দ্বিগুণ করার কথা শুনে তিনি অর্থ তুলতে এসেছেন। তিনি বলেন, গণহারে এ করারোপ করা উচিত হয়নি। কিন্তু কালোটাকা ও অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীদের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তোলার ব্যাপক ভিড় ছিল গত সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের কর্মকর্তারা জানান, সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের সাধারণত দিনে ১৩ থেকে ১৪শ টোকেন দেওয়া হয়। তবে গত মঙ্গলবার ২৮শ টোকেন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেওয়া হয় ৩ হাজার টোকেন। এখন গ্রাহকদের বেশিরভাগই মুনাফা তুলতে আসছেন। অনেকেই আছেন যারা বছরে একবার মুনাফা তোলেন। এ ধরনের গ্রাহক বেশি আসছেন।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও মুনাফা প্রদানের সঙ্গে জড়িত কয়েক কর্মকর্তা জানান, রাত ৮ থেকে ৯টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। সব কাজ শেষ করে অফিস ত্যাগ করছেন ১১ থেকে সাড়ে ১১টায়। ৩০ জুন পর্যন্ত এ ভিড় থাকবে। আগামীতে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান তারা।
সঞ্চয়পত্রের সুবিধাভোগী নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিক্রি হওয়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ কিনিছেন পেনশনার। তবে আর কোন পেশার মানুষ কত সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তার কোনো হিসাব সরকারের কোনো সংস্থার কাছে নেই। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে একেবারে সাধারণ মানুষ উপকৃত হওয়ার সুযোগ নেই। নামে-বেনামে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি কোটি টাকারও সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছে। সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নিলেও অজানা কারণে কমাতে পারছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রভাবশালী সঞ্চয়পত্রের সুবিধা ভোগ করছেন। একদিকে তাদের কালোটাকার নিরাপদ বিনিয়োগ করতে পারছেন অন্যদিকে বেশি সুদ নিতে পারছেন। ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের প্রায় দ্বিগুণ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে নতুন হার কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। ১০ শতাংশ কর নতুন করে যারা সঞ্চয়পত্র কিনবেন শুধু তাদের দিতে হবে নাকি আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপরও দিতে হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাও বলছেন, ১০ শতাংশ উৎসে কর ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে। যারা এখনো মুনাফার টাকা তোলেননি এবং যারা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়েই মুনাফার টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০ জুনের মধ্যেই তা তুলে ফেলা। সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না।
উৎসে কর দ্বিগুণ করার কারণে সমাজের সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের আয় কমে যাবে। যেমন- সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে কোনো গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন, ১ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর।
এর আগে ২০১১ সালে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানোর সময়ও এ নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ওই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এনবিআরের নির্দেশনা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোন উপায়ে উৎসে কর কর্তন করা হবে তা তারা বলতে পারবেন না। তবে ৩০ জুনের মধ্যে মুনাফা না তুললে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হবে- এমন খবরে তাদের ওপর ব্যাপক চাপ বেড়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত কর্মকর্তাদের অফিস করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদের হার এখন ১১ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার এখন ৬ শতাংশের মতো। মেয়াদি আমানতের সুদহার এর চেয়ে একটু বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিক্রি হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা।