বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও লকডাউন এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। তবে সকলের মনে একটাই প্রশ্ন এই চলমান লকডাউন আর কতদিন চলবে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আমেরিকার একদল গবেষক। এই গবেষণাটি এই সপ্তাহে এসএসআরএন এ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের ৩৬টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে ওপর গবেষণা করেছেন সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্শাল স্কুল অব বিজনেসের জেরার্ড টেলিস, ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইড এর এ গ্যারি অ্যান্ডারসন, গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের আশীষ সৌদ এবং অগাস্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার এবং আণবিক জীববিজ্ঞানের ছাত্র নিতেশ সৌদ।
এসএসআরএন এ প্রকাশিত গবেষণা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ।
এই গবেষণায় বলা হয়েছে, কোনো দেশ যদি তিন সপ্তাহ কঠোর লকডাউন মান্য করে তবে এই মহামারি কিছুটা সংযত করা সম্ভব। আর চার সপ্তাহ মানে এক মাস লকডাউন চালিয়ে গেলে এই মহামারি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ছয় সপ্তাহ মানে ৪৫ দিন লকডাউন হলে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে ছয় সপ্তাহ লকডাউন হলে কোনো দেশ পুরোপুরি এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে।
এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনের আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত হয় ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে অথবা কয়েক মাসব্যাপী লকডাউন ও ঘরে থাকার নির্দেশ মান্য করতে হবে। ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা ব্যয়বহুল হওয়ায় লকডাউনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই গবেষণায় কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া বেশ ভালো ভাবেই করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে। ব্যাপক আকারে পরীক্ষা, বিদেশিদের প্রবেশে এয়ারপোর্টে পরীক্ষা, নিষেধাজ্ঞা ও লকডাউনের মতো পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়ার কারণে তাদের অবস্থান বেশ ভালো। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে অবহেলা ও ধীর গতির জন্য এই ভাইরাস মহামারি রূপ নিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টেট লকডাউন করার কারণে এই ভাইরাসের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি ডারাক্সের পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলের ১০ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে। মৃত্যুবরণ করেছে ৫৩ হাজার ১৯০ জন। এ ছাড়া এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার ২২৯ জন।