সরকারের অনুমোদন পাওয়া মাঝারি আকারের ১০টি ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশেরই বেহাল দশা। এগুলোর কোনটিরই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো উৎপাদনে আসার নিশ্চয়তা নেই। তবু বিদ্যুৎ বিভাগ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে নিয়ে আসতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। যদিও জরিমানা আদায় আর সময় বৃদ্ধির চক্রেই আটকে আছে সব।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় সবকটিই উৎপাদনে আসতে নতুন করে সময় চেয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ মাঝারি বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ১০ মাঝারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খুলনায় প্রস্তাবিত ‘কেরানীগঞ্জ ৯৯ দশমিক ৩৮২ মেগাওয়াট’ ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সি-ক্যাটাগরির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট পিডিবির সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর তাদের উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই।
এ ছাড়া এখনো ভূমি উন্নয়ন ও সামান্য সিভিল কাজ ছাড়া কিছুই হয়নি। একই অবস্থা ভৈরব পাওয়ার কোম্পানির আইপিপিভিত্তিক ৫৪.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। এটি নির্মাণে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর পিডিবির সঙ্গে চুক্তি করে কোম্পানিটি। চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী এক বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবরের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির; কিন্তু এখনো তারা উৎপাদনে আসতে পারেনি। বর্তমানে কোম্পানি প্রস্তাবিত স্থানে মাটি ভরাট এবং কিছু কনস্ট্রাকশন কাজ করেছে।
তবে কোম্পানিটিকে ডিলে ইন কমিশনিং চার্জ বা এলডি নোটিশ ১৫ দিন পর পর দেওয়া হচ্ছে। এর্কন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস ইউনিট-২ লিমিটেড কোম্পানির চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন আইপিপি-ভিত্তিক ১০০ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েল-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জুলদায় ১৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে উৎপাদনে আসার কথা ছিল চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি কিছু জমি সংগ্রহ করে মাটি ভরাট করেছে। এ ছাড়া আরও জমি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কিছু কিছু সিভিল কনস্ট্রাকশন কাজ শেষ হয়েছে। দেরিতে উৎপাদনে আসার কারণে এখন ১৫ দিন পর পর পিডিবি কোম্পানিটিকে ডিলে কমিশনিং (এলডি) বা জরিমানার নোটিশ দিচ্ছে। সময়মতো উৎপাদনে আসতে না পারা আরেক প্রকল্প টাঙ্গাইলে নির্মাণাধীন আইপিপিভিত্তিক ২২ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বৈত জ্বালানি (গ্যাস ও তেল) বিদ্যুৎকেন্দ্র।
টঙ্গী পল্লী পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে পিডিবি ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চে এটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন সবেমাত্র জমি ভরাট কাজ চলছে। দেরির কারণে এই কোম্পানিকেও এলডি নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমেরিকান লিবার্টি পাওয়ার কোম্পানির ফেঞ্চুগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিরও উৎপাদনে আসার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে খসড়া জিএসএর ওপর মতামত প্রদানের জন্য পিডিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আরও রয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ৫৪ দশমিক ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছর ১৯ মার্চ এটি নির্মাণে চুক্তি করা হয়। চলতি বছরের মার্চে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু এই প্রকল্পেরও আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। ফলে কোম্পানিটিকে জরিমানা করেছে পিডিবি। এমন আরেকটি প্রকল্প কাঞ্চন পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির দ্বৈত জ্বালানির নারায়ণগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।
গত বছর ১৪ মে এটি নির্মাণে পিডিবির সঙ্গে চুক্তি করে স্পন্সর কোম্পানি। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনের কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে না আসতে পারলে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে। প্রিসিশন এনার্জি কোম্পানির ফার্নেস অয়েলভিত্তিক পটিয়া চট্টগ্রাম ১১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিরও একই অবস্থা। এটি নির্মাণে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই চুক্তি করে পিডিবি।
চলতি বছরের ১১ নভেম্বর এর উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারলে বিলম্ব জরিমানা বাবদ কোম্পাটির কাছ থেকে এলডি আদায় করা হবে।