চিতাবাঘের চেয়েও ৩ গুণ গতিতে ছুটতে পারে যে প্রাণি, তার নাম পেরেগ্রিন শাহিন। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রাণি। পেরেগ্রিন শাহিন যখন শিকার করে; তখন মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করে। এটি ডানা দুটো শরীরের সঙ্গে লেপ্টে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার এবং তারচেয়ে বেশি বেগে উড়ে এসে শিকার ধরে। গতির দিক থেকে এরা চিতাবাঘকেও হার মানায়। চিতার গতি শিকার ধরার সময় যেখানে ঘণ্টায় ১১২-১২০ কিলোমিটার; সেখানে পেরেগ্রিন শাহিনের গতি ৩০০-৩৫০ কিলোমিটার।
পেরেগ্রিন শাহিন শিকারকে ধরে তুলে নিয়ে যায় তার নির্ধারিত জায়গায়। সেখানে প্রথমে পালক তুলে ফেলে, তারপর মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। কবুতর, জলজ পাখি, বক ও হাঁস শিকার করে খায়। খাবারের প্রয়োজনে বাঁদুড়, খরগোশ, ইঁদুর ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণি, সরীসৃপ, কীটপতঙ্গ-এমনকি মাছও শিকার করতে পারে। উড়ন্ত অবস্থায় বাঁদুড় বা অন্য পাখিদের ঘায়েল করতে সিদ্ধহস্ত।
পরিযায়ী এ প্রাণির দেখা মেলে শীতকালে। এরা নদী, হ্রদ, খাড়া পাহাড়, জলাভূমি, প্যারাবন, অর্ধ মরুভূমি, পাথুরে প্রান্তরে বিচরণ করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত উপমহাদেশ, চীন, ইন্দোনেশিয়ায় এদের দেখা যায়।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখিবিদ ড. ইনাম আল হক জানান, সাধারণত এরা একাকী শিকার করে। পরিযায়নের সময়ও একাকীই থাকে। খুব কম সময়েই এরা জোড়া বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। শিকারকে আঘাত করে শূন্যে। ওপর থেকে নেমে আসে সোজাসুজি প্রায় ৩শ কিলোমিটার গতিতে ডানা শরীরের দুই পাশে চেপে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারকে মুহূর্তেই ধরে ফেলে।
পেরেগ্রিন শাহিন সাধারণত দৈর্ঘ্যে ৪২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এর ডানা ২৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৬ সেন্টিমিটার, পা ৪.৯ সেন্টিমিটার এবং লেজ ১৪.৫ সেন্টিমিটার হয়। ছেলে আর মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। তবে মেয়ে পাখি আকারে তুলনামূলক বড় হয়। মাথা কালো, গালে গালপাট্টার মতো, চোখের তলায় সাদার ওপর কালোর ছোপ। ওপরের অংশে ধূসরের কালো টান আছে। চওড়া কাঁধ, ডানা চওড়া থেকে সরু।
তীক্ষ্ম দৃষ্টি ক্ষমতার অধিকারী এদের চোখের রং গাঢ় বাদামি। বুকের তলা থেকে তলপেট পর্যন্ত খুব সরু সরু কালচে টান রয়েছে। ডানার তলায়ও কালো কালো টানে ভরা। লেজ ছোট এবং ছড়ানো নয়। ভোর ও গোধূলি বেলা এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। মার্চ থেকে মে মাস এদের প্রজননকাল। ডিম দেয় ৩-৪টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে ছানা বের হতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন।