সোমবার, ০৩ Jun ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

বর্ষা আসার আগেই রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ১০ রোগী। গত ১১ দিনে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৮ জন ভর্তি হয়েছেন। মৌসুমের শুরুতেই এমন চিত্রে রাজধানীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে চলতি জুনে কারও মৃত্যু না হলেও গেল এপ্রিলে চিকিৎসাধীন প্রাণ হারিয়েছেন দুজন।

জানা গেছে, এপ্রিল-অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম ধরা হয়। রাজধানীর ১৩টি সরকারি ও ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর বাইরেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যার সাধারণত কোনো পরিসংখ্যান থাকে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৩ জন। আর ১-১১ জুন পর্যন্ত ১০৮ জন চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ৩৭ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তবে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কোনো রোগী নেই। এদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৩৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৪, মে মাসে ৩৯ এবং গত ১১ দিনে ১০৮ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর মধ্যে চিকিৎসাধীন গত ২৫ এপ্রিল বিআরবি হসপিটাল লিমিটেডে একজন এবং ২৯ এপ্রিল আজগর আলী হাসপাতালে আরও একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করছে। আগাম বৃষ্টির কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ একটি বেশি হতে পারে। তাই মশা নিধনে আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ ছাড়া ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এপ্রিল-অক্টোবর ডেঙ্গু রোগ ছড়ানো বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এবার সেটি আগে থেকেই বাড়তে থাকে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ফলে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গুর ভাইরাস। এ থেকে বাঁচতে হলে এডিস মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারেও সচেতন বাড়াতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুুল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন করে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট চেম্বারেই বেশি রোগী আসছে। এ মৌসুমে জ্বর বা শরীরে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। আক্রান্ত রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের লক্ষণ (যেমন-মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) দেখা দেয়, তখনই একে হেমোরেজিক ডেঙ্গু বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। এ বছর হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু হলে রোগীর জ্বরের পরিমাণ বেশি হয় এবং গায়ে রেশ ওঠে। তবে এ বছর কম জ্বর এবং গায়ে রেশ ওঠেনি এমন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে অনেকেই সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসকের কাছে যান। এতে রোগী সিরিয়াস অবস্থায় চলে যাচ্ছে, যাদের বাঁচানোই কষ্টকর। কারও যদি ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকে, তখন অবশ্যই চিকিৎকসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিশ্রামে রাখতে হয়। এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য কেবল প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877