স্বদেশ ডেস্ক: নবীনগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মনজু’র কাণ্ডে হতবাক ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। ওই এলাকার সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের কাছে তার দলের ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নালিশ দিতে যান বিএনপি’র এই নেতা। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে। জেলা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন-এনিয়ে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। মনজু জেলা বিএনপি’রও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২৪শে নভেম্বর দুপুরে নবীনগর মহিলা কলেজে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের একটি অনুষ্ঠান চলাকালে সেখানে কয়েকজনকে নিয়ে হাজির হন বিএনপি নেতা মনজু । এসময় তিনি একটি স্মারকলিপিও দেন এমপি’র হাতে। তার আগে বলেন, তাদের গ্রাম নারায়ণপুরে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে সেই আবেদন জানাতে এসেছেন।
তারা ন্যায় বিচার চান। তিনি আরো বলেন-আমি ঘটনার শিকার। এরপর মনজু পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে কথা বলতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতারা সেটি দলের ব্যাপার বলে থামিয়ে দেন। তার বক্তব্য শুনে সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল বলেন-আমি দলের হলেও ছাড়বো না। সন্ত্রাসী যেই হোক, যত বড়ই হোক। আমি যতদিন আছি ততদিন কোন কম্প্রোমাইজ করবো না। এসময় এমপি’র সঙ্গে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের নাম-পদবী শ্রদ্ধা এবং বিনয়ের সঙ্গে এড্রেস করেন মনজু।
জানা গেছে, ৭ই নভেম্বর মনজু’র ওপর হামলা হয় নবীনগরে। দলের কার্যালয়ের সামনেই তাকে কিল-ঘুষি মারেন পৌর নির্বাচনের আগে দল থেকে পদত্যাগকারী ছাত্রদল ও বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকর্মী। যার নেতৃত্ব দেন হযরত আলী ও রুবেল। এ ঘটনার ৪দিন পর ১১ই নভেম্বর নবীনগর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির পদত্যাগী সহ-সভাপতি মো. মাঈন উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ও পৌর ছাত্রদলের পদত্যাগী সভাপতি আশরাফুল ইসলাম রুবেলসহ ২২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন মঞ্জু। গত ১৪ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে দলের বর্তমান মেয়র মাঈন উদ্দিনকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয় পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিনকে।
শাহাবুদ্দিন পান ২১৭৮ ভোট। আর মাঈন উদ্দিন পান ৪২২০ ভোট। দলের মনোনয়ন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ২৭ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। মাঈন উদ্দিনকে মনোনয়ন বঞ্চিত করার জন্য আনিছুর রহমান মনজুকে দায়ী করেন দলের নেতাকর্মীরা। তার এই সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি’র নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। এরআগে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বিক্রির ১ লাখ টাকার হিসেব দিতে না পারার এবং বিভিন্ন কমিটি গঠনে তার বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ করেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী নেতাকর্মীরা। তাছাড়া প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত অনলাইন যুবদলের সদস্যদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ করেন তারা মঞ্জুর বিরুদ্ধে। আনিছুর রহমান মনজু এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেন-এটা আলোচনার কোন বিষয় নয়। দলের পদত্যাগকারীরা আমার ওপর হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে আমার গ্রামে সভা হয়। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে এমপি’র কাছে গিয়েছেন। এটা দলের কোন ব্যাপার নয়। মনোনয়ন ও কমিটি নিয়ে বানিজ্যের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে জানান তিনি।
তবে মন্জু এমপি’র দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া রয়েছে জেলা বিএনপিতে। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন বলেছেন, বর্তমানে প্রেক্ষাপটে তার যাওয়াটা ঠিক হয়নি। অর্থাৎ মিডনাইটের ভোটে যারা এমপি হয়েছেন তাদের কাছে যাওয়া ঠিক হয়নি তার। আরেকটি হচ্ছে প্রশাসন চালায় এমপি’রা। তাদের কারণে আইন নিজস্ব গতিতে চলতে পারে না। এমপি হয়তো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিনা সেটা মনে করে যেতে পারে সে। আমরা আলোচনা করবো। খোকন আরো বলেন- সে ইমোশনাল মানুষ। যেটা মাথায় ঢুকে সেটাই করে। জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন- জেলা বিএনপি থাকতে কেন সে আওয়ামী লীগ এমপি’র কাছে গেলো। সেটি তার কাছে আমরা জিজ্ঞেস করেছি। আমরা দেখবো এটা।