স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ-জাপান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে সংযুক্ত করে একটি আঞ্চলিক শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল (ভ্যালু চেইন) তৈরি করতে সরকারি সংস্থা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম গঠনের উপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনায় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এই পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে এই অঞ্চলটি একটি বড় প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তারা বলেন, এই অঞ্চলে শিল্প, অবকাঠামো ও জ্বালানি সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ, বাণিজ্য নীতি ও কর সংস্কার, পণ্য সমন্বয় এবং শুল্ক ব্যতীত অন্য বাধা অপসারণ প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে আঞ্চলিক শিল্প ও উন্নয়নকে আরো এগিয়ে নেয়ার।’
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জাপান দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বঙ্গোপসাগরে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়ন এবং শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠার সেমিনারে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমও বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশে একটি প্রধান বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগকারী হলো জাপান। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দরের সাথে সংযোগকারী সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে দেশটি।
জাপান ২০১৪ সাল থেকে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) উদ্যোগের অধীনে
বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে এবং এর বাইরে শিল্প ও অবকাঠামো ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।
এছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিকাঠামো ও শিল্প নির্মাণে ভারতকে সহায়তা করছে জাপান।
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের অধ্যাপক ড. প্রবীর দে বলেন, ‘এই অঞ্চলে একটি শিল্প মূল্য শৃঙ্খল এখন খুবই প্রয়োজন।’
যেহেতু এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকগুলো উপাদান জড়িত থাকবে, তাই আঞ্চলিক শিল্প মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানকে একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামোগত সহযোগিতা চুক্তির আওতায় আসার পরামর্শ দেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যদিও এটি একটি সম্ভাব্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কিন্তু এটি এমন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রকল্পের ব্যয় বেশি হচ্ছে কি না তাও মাথায় রাখতে হবে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বন্দরের চাহিদা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি বন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্গো আসে তবেই এর সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। সেই চাহিদা তৈরির জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, নেপাল ও ভুটানকে কীভাবে মূল্য শৃঙ্খলে সংযুক্ত করা যায় তাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানের সংযোগ ছাড়া মাতারবাড়ী কার্যকর হতে পারে না।
দেবপ্রিয় বলেন, প্রায়শই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুরা মাধ্যমে তৈরি হয়। ভারত একটি ফেডারেল ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক দিল্লির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়। এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া দরকার বলে জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘জাপান তার শিল্প চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে কি না সেটিও একটি বিষয় হবে।’
ভারতভিত্তিক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের নির্বাহী পরিচালক সব্যসাচী দত্ত অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, জাপান ইতোমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে অনেক সংযোগ পরিকাঠামো তৈরি করেছে, তবে আরো অনেক কিছু করা দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাতারবাড়ী ও চট্টগ্রাম থেকে ত্রিপুরার সাব্রুম ও আগরতলা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক ও রেলপথের মধ্যে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির উন্নয়নে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি জাপানের মধ্যে বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতাগুলোও দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি, সীমান্তের ওপারে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচল এবং তৃতীয় দেশের বাণিজ্যকে সহজতর করার কিছু অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সূত্র : ইউএনবি