স্পোর্টস ডেস্ক:
এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ১৫তম আসরের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে আগামীকাল মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত ও পাকিস্তান। এ দুই দেশের লড়াইটা বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাকর হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। এই মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে মুখিয়ে থাকে দু’দলই। তাই প্রতিবারই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে থাকে বাড়তি উন্মাদনা। এবারো এর ব্যতিক্রম নয়।
টুর্নামেন্টে এ’ গ্রুপে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপের অন্য দল হংকং। বাছাই পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে নাম লেখায় তুলনামূলক দুর্বল দলটি।
রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ড। সর্বশেষ ২০১২ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছিলো ভারত-পাকিস্তান। তাই একে অপরের মুখোমুখি হতে ভারত-পাকিস্তানের অপেক্ষা করতে হয়- আইসিসির ইভেন্ট বা এশিয়া কাপের জন্য। এবার এশিয়া কাপের মঞ্চে লড়বে ভারত ও পাাকিস্তান।
১৯৫২ সালে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তান। তখন থেকেই বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে। সেই উত্তাপ এই আধুনিক যুগে একটুও কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না হওয়াতেই উত্তাপ বহুগুনে বেড়ে গেছে।
সর্বশেষ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তানের। এরপর থেকেই পরের ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা। অবশেষে দীর্ঘ ১০ মাস পর আরো একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।
তবে ভারত-পাকিস্তান লড়াইকে স্রেফ একটি ‘ম্যাচ’ বলেই মনে করেন দুই দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা। তাদের মতে, এটি অন্যান্য ম্যাচের মতই। তবে চাপ অনুভব করেন দলে থাকা ক্রিকেটাররা।
বাড়তি চাপ থাকায়, মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে মরিয়া ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘সকলেই এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব চাপের ম্যাচ এটি, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে দলের পরিবেশ হালকা পরিবেশ রাখতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ম্যাচ নিয়ে খুব ভেবে নিজেদের চাপে ফেলতে চাই না। যারা কোনো দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেনি বা মাত্র একটি-দুটি ম্যাচে খেলেছে, তাদের ভালো করে এই ম্যাচের গুরুত্ব বোঝাতে চাই। আমরা পাকিস্তানকে অন্য যে কোনো সাধারণ বিপক্ষের মতোই দেখছি। তবে ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ার লক্ষ্য আমাদের।’
রোহিতের সুরে কথা বলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমও। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ম্যাচের মত হলেও, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বাড়তি চাপ এমনতিতেই চলে আসে। এই চাপকে সামলেই লড়াই করতে হয় ক্রিকেটারদের। কারণ সকলেই জানে, এমন ম্যাচের গুরুত্ব কত বেশি। তাই জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে ক্রিকেটাররা। এবারো আমরা জয়ের জন্য মাঠে নামবো।’
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক কথায় ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান। ১০ উইকেটে বিশাল জয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত জয়ের দেখা পায় পাকিস্তান। এই সর্বশেষ জয়ে পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি এবং কিছুটা হলেও দল এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন বাবর।
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ ম্যাচে জিতেছিলাম। যেভাবে ভারতকে হারিয়েছিলাম সেটি প্রশংসা করার মতই ছিলো। ওই জয় আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।’
তবে অতীত নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত। সামনের ম্যাচের দিকেই মনোযোগী হতে চান তিনি, ‘গত বিশ্বকাপে আমরা হেরেছিলাম। ওই ম্যাচে আমরা দল হিসেবে মোটেও ভালো খেলতে পারিনি। এ ধরনের ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে হয়। তবে অতীতে কি হয়েছে, তা নিয়ে এখন আর আমরা ভাবছি না। শূন্য থেকে আবার এশিয়া কাপে শুরু করতে চাই। অতীতে কয়বার দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে এবং কে বেশি জিতেছে, এ ধরনের পরিসংখ্যান থাকবে। কিন্তু ম্যাচের দিন দু’দলকেই প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।’
গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ফর্ম নেই ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলির। তাই কোহলির ব্যাটে বড় ইনিংসের প্রত্যাশা দলের। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে রানে ফিরতে পারলে যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা মত অবস্থা হবে কোহলির। পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশে থাকলেই, বিশ্বের ১৪তম ও ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন কোহলি।
এ ব্যাপারে রোহিত বলেন, ‘আমাদের সবারই প্রত্যাশা কোহলি ফর্মে ফিরবে। বড় ও ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলবে। তবে কোহলির অফ-ফর্ম নিয়ে নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই। দলের জয়ের জন্য সবসময়ই উন্মুখ থাকে কোহলি। বহু বছর ধরে এটাই করে আসছে সে। এবারো তাই করবে কোহলি। বড় ইনিংস খেলতে ক্ষুধার্ত হয়ে আছে সে। আর কালকে ম্যাচটি কোহলির জন্য স্পেশাল। স্পেশাল ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখার বড় সুযোগ তার।’
কোহলির ফর্ম নিয়ে চিন্তিত ভারত। অন্য দিকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জোড়া ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। ইনজুরির কারণে আগেই এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাদের পরিবর্তে মোহাম্মদ হাসনাইন ও হাসান আলিকে দলে নিয়েছে পাকিস্তান।
দুই পেসারের ছিটকে যাওয়ায় হতাশ বাবর। তিনি বলেন, ‘বিশ্বমানের বোলার শাহিন আফ্রিদি। সে খেললে খুব ভাল লাগতো। দুর্ভাগ্যবশত ওয়াসিমও ছিটকে গেছেন। ইনজুরির উপর তো কারো হাত নেই। আশা করছি, যারা আছে সকলেই ভালো করবে।’
টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত নয়বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। সেখানে সাতবার জিতেছে ভারত। দুইবার জয় পায় পাকিস্তান।
আর এশিয়া কাপের মঞ্চে মোট ১৫ বার মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। তাতে জয়ের পাল্লা ভারী ভারতেরই। আটবার জয় পায় ভারত এবং পাঁচবার জিতে পাকিস্তান। দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ হয়েছিলো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ওই আসরে ভারত পাঁচ উইকেটে হারিয়েছিলো পাকিস্তানকে।
পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, আসিফ আলি, ফখর জামান, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), হাসান আলি, নাসিম শাহ, শাহনেয়াজ দাহানি, মোহাম্মদ হাসনাইন ও উসমান কাদির।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), দিনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদিপ সিং, রবি বিষ্ণই, আভেশ খান, দীপক হুডা ও যুজবেন্দ্রা চাহাল।